তিস্তা সেতু: রাজধানীর সঙ্গে কুড়িগ্রামের দূরত্ব কমবে ১৩৫ কিলোমিটার।
কৃষি, ব্যবসা ও পর্যটনে আসছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
জাতীয় সংবাদ | ফিনিক্স নিউজ
প্রকাশ: ৪ জুলাই ২০২৫ ইং
মাত্র দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু বদলে দিচ্ছে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা। গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামের দূরত্ব কমবে প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার। এতে করে কৃষিপণ্য পরিবহন সহজ হবে, বাজারজাতকরণ বাড়বে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে আসবে গতি।
সেতুর অবস্থান ও বিবরণ:
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ঘাট থেকে তিস্তা নদীর ওপর দিয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে ১,৪৯০ মিটার দীর্ঘ দ্বিতীয় তিস্তা গার্ডার সেতু। নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী জানিয়েছেন, জুলাইয়ের শেষে সেতুটি উদ্বোধন করা হবে।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৮৮৫ কোটি টাকা। সেতুটির নির্মাণে রয়েছে ২৯০টি পাইল ও ৩১টি স্প্যান। পাশাপাশি নির্মাণ করা হয়েছে ৮৬ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং ৩.৫ কিলোমিটার নদী শাসনের কাজ। সেতু নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে ১৩৩ একর জমি।
যোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্ভাবনা:
সেতুটি চালু হলে শুধু গাইবান্ধা-কুড়িগ্রাম নয়, পার্শ্ববর্তী জেলা লালমনিরহাট ও গাইবান্ধার সঙ্গেও যোগাযোগ সহজ হবে। কুড়িগ্রামের পরিবহন শ্রমিকদের তথ্য মতে, আগে যেখানে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকায় যেতে ৮ ঘণ্টার বেশি সময় লাগত, সেখানে এখন সময় লাগবে ৬ ঘণ্টার মতো।
এই সেতুর মাধ্যমে কৃষকরা দ্রুত পণ্য পরিবহন করতে পারবেন। এতে ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে। নদী শাসনের ফলে কমবে তিস্তার ভাঙন। চিকিৎসা, শিক্ষা ও ব্যবসায়িক সুযোগও বৃদ্ধি পাবে।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া:
সুন্দরগঞ্জের হরিপুর ঘাট এলাকার বাসিন্দারা বলেন, আগে চিলমারী ঘাটে যেতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগত। এখন মাত্র কয়েক মিনিটেই পার হওয়া যাবে। এটি কৃষিপণ্য পরিবহন, শিক্ষাগ্রহণ ও চিকিৎসার জন্য বড় সুবিধা হবে।
গাইবান্ধার বাসিন্দারা বলছেন, এতদিন কুড়িগ্রামে যেতে লালমনিরহাট হয়ে ঘুরপথে যেতে হতো। সেতু চালু হলে সরাসরি সড়কপথে যোগাযোগ সম্ভব হবে। ফলে সময়, খরচ ও শ্রম—সবকিছুর সাশ্রয় হবে।
নির্মাণ ইতিহাস ও পেছনের গল্প:
তিস্তা পাড়ের মানুষের দীর্ঘ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২০১২ সালে সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হলেও নানা জটিলতায় কাজ বিলম্বিত হয়। ২০২১ সালে পুরোদমে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৪ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কিছু অসমাপ্ত কাজের কারণে উদ্বোধন পিছিয়ে যায়।
তিস্তা গার্ডার সেতু শুধু দুটি জেলা সংযুক্ত করছে না, এটি উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবনে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে। কৃষি, ব্যবসা, শিক্ষা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও খবর পড়ুন …
যোগাযোগ: [email protected]
ওয়েবসাইট: www.finixnews.com