এনসিপি গোপালগঞ্জ সংঘর্ষ ! ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে হামলা, শহরজুড়ে কারফিউ, নিহত ৪।
📅 প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০২৫
✍️ Finix News Desk
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ভয়াবহ সহিংসতায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন বহু মানুষ। এনসিপি গোপালগঞ্জ সংঘর্ষে রাজনৈতিক উত্তেজনা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও গুলির ঘটনার জেরে পুরো শহর পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। প্রশাসন পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৪৪ ধারা জারি করে, পরবর্তীতে ঘোষণা করা হয় ২২ ঘণ্টার কারফিউ।
সংঘর্ষের শুরু: সমাবেশের আগেই হামলা:
বুধবার দুপুরে গোপালগঞ্জ পৌরপার্ক এলাকায় এনসিপি’র ঘোষিত কর্মসূচি চলাকালে সমাবেশস্থলে হামলা চালায় একদল দুর্বৃত্ত। এনসিপি অভিযোগ করেছে, এটি ছিল আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলোর সুপরিকল্পিত হামলা। সভামঞ্চের সাউন্ড সিস্টেম, চেয়ার-মাইক ভাঙচুর করা হয় এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। যদিও তখনও এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশস্থলে পৌঁছাননি।
পাল্টা প্রতিক্রিয়া ও সমাবেশ:
প্রথম ধাক্কা সামাল দিয়ে এনসিপি’র নেতাকর্মীরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং সভাস্থলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সমাবেশে বলেন, “মুজিববাদীরা বাধা দিয়েছে। অচিরেই এর জবাব দেওয়া হবে।” তিনি আরও বলেন, গোপালগঞ্জে ‘সন্ত্রাসীদের আস্তানা’ হতে দেওয়া হবে না।
ফেরার পথে গাড়িবহরে হামলা:
সমাবেশ শেষে গোপালগঞ্জ সরকারি কলেজের কাছে ফেরার পথে এনসিপি নেতাদের বহনকারী গাড়িবহরের ওপর চালানো হয় ভয়াবহ ইটপাটকেল হামলা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ার গ্যাস ছোঁড়ে। এরপর সেনাবাহিনী টহলে গেলে তাদের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটে।
পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হলে নেতাদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আশ্রয় দেওয়া হয়। এরপর সেনা ও পুলিশের কঠোর পাহারায় তারা গোপালগঞ্জ ত্যাগ করেন।
সরকারি গাড়ি ও কর্মকর্তাদের উপর হামলা:
এনসিপি গোপালগঞ্জ সংঘর্ষে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পুলিশের গাড়িতেও হামলা হয়। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অভিযুক্ত করে থানার ওসি জানান, তারা পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। একইভাবে ইউএনও’র গাড়িবহরেও হামলা হয় এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
সেনা-পুলিশ টহল, শহর ফাঁকা:
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেনাবাহিনী, র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়। রাত ৮টা থেকে পরদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জারি করা হয় কারফিউ। শহর প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। চোখেমুখে আতঙ্ক নিয়ে ছিটেফোঁটা মানুষ চলাফেরা করতে দেখা যায়।
পুলিশের আইজিপি বাহারুল আলম জানান, “আমরা এখনো প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করছি না, ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।”
আহত ও নিহতের সংখ্যা:
গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবিতেশ বিশ্বাস নিশ্চিত করেছেন, সংঘর্ষে নিহত চারজনের মরদেহ হাসপাতালে এসেছে। তাদের শরীরে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আহতদের সংখ্যা নির্দিষ্ট না হলেও তা উল্লেখযোগ্য বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ:
ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে এনসিপি। খুলনায় সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম জানান, “জুলাই পদযাত্রা থামানো যাবে না। এই হামলার বিচার চাই।”
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেন, “দেশকে অস্থিতিশীল করতেই আওয়ামী লীগ এই হামলার পরিকল্পনা করেছে।” তিনি অবিলম্বে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান।
সরকারের প্রতিক্রিয়া: ‘বিচার হবে, ছাড় নয়’:
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এনসিপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করে নাগরিকদের অধিকার হরণ করা হয়েছে। “নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ অ্যাকটিভিস্টদের এই জঘন্য কাজ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না,” উল্লেখ করে বলা হয়েছে, হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিত করা হবে।
সারসংক্ষেপ:
- নিহত: ৪ জন (নাম প্রকাশ হয়নি)
- আহত: অনির্ধারিত সংখ্যা
- কারফিউ: বুধবার রাত ৮টা – বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা (২২ ঘণ্টা)
- অভিযুক্ত: ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা (এনসিপির দাবি)
- বিক্ষোভ: সারা দেশে এনসিপির প্রতিবাদ কর্মসূচি
- বিচার: সরকার জানিয়েছে, জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না
গোপালগঞ্জে এনসিপির ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া সহিংসতা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। নিহত ও আহতদের ঘটনায় উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোও। সরকার দায়ীদের শাস্তির আশ্বাস দিলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ও কারফিউর মতো কঠোর পদক্ষেপ সাময়িক স্থিতি আনলেও রাজনৈতিক উত্তেজনার স্থায়ী সমাধান এখনো অনিশ্চিত।
📣 আরও পড়ুন:
- গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে সংঘর্ষে নিহত ৪ জনের পরিচয়
- মিটফোর্ডে চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীকে পাথর দিয়ে হত্যা!
- নির্বাচন না হওয়ায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি: মির্জা ফখরুল
- ঠাকুরগাঁও হরিপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত।
ফিনিক্স নিউজ আপনাদেরকে সর্বশেষ ও নির্ভরযোগ্য সংবাদ পৌঁছে দিচ্ছে। আমাদের সাথেই থাকুন আরও আপডেট পেতে।
📱 ফলো করুন: Facebook | Twitter/X | YouTube