মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক চার্জ গঠন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু।
ঢাকা | ৩০ মে ২০২৫ | Finix News | ফিনিক্স নিউজ :
গণহত্যা, নির্যাতন ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবশেষে আনুষ্ঠানিক চার্জ গঠন করেছে প্রসিকিউশন। এর মাধ্যমে দেশের ইতিহাসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হলো বলে মত দিয়েছেন আইন বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্টরা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বুধবার এ চার্জ দাখিল করে প্রসিকিউশন দল। এই প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা নজরুল ইসলাম একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন,
“ট্রাইব্যুনাল ফরমাল চার্জ আমলে নেওয়ার মাধ্যমে একটি বিচার প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। সেটি কাল বাংলাদেশে শুরু হয়ে গেল।”
মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রধান আসামি শেখ হাসিনা:
ফরমাল চার্জ অনুযায়ী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের গণআন্দোলন দমন ও পরিকল্পিত নিধনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন বলে উল্লেখ করেছে প্রসিকিউশন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে:
- ব্যাপক গণহত্যা
- বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড
- সাংবিধানিক কাঠামো ধ্বংস করে একনায়কতন্ত্র চাপিয়ে দেওয়া
- যুদ্ধাপরাধের সহযোগিতা
আইন উপদেষ্টা নজরুল তার স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন,
“মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রধান আসামি হিসেবে শেখ হাসিনার মামলার বিচারের শুনানী পর্ব শুরু হচ্ছে অচিরেই। ইনশাল্লাহ্, ড. ইউনূস স্যারের সরকারের শাসনামলেই এই বিচারের রায় পেয়ে যাবো আমরা।”
নজিরবিহীন দ্রুততার সঙ্গে শুনানি প্রক্রিয়া শুরু:
শুধু অভিযোগ দাখিলই নয়, মামলার শুনানি প্রক্রিয়াও খুব দ্রুত শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নজরুল আরও বলেন,
“মানবতা বিরোধী অপরাধ মামলায় শুনানি শুরু করার ক্ষেত্রে এর চেয়ে দ্রুততর কোনো নজির বাংলাদেশে নেই।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার একটি ঐতিহাসিক ও সাহসী পদক্ষেপ। যেখানে অতীতে বহু মামলায় বছর পার হলেও অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে পৌঁছানো যায়নি, সেখানে মাত্র কয়েক মাসেই এই মামলায় তা সম্পন্ন হয়েছে।
“গণহত্যার বিচার, আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার”:
নজরুল তার স্ট্যাটাসে আরও বলেন,
“গণহত্যার বিচার, আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের পথেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, এই বিচার শুধু আইনগত দায় নয়, এটি জাতির নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যদি মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী প্রমাণিত হন, তবে তার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিও উত্থাপিত হতে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা:
এই মামলা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশের এই পদক্ষেপকে গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছে।
অনেকেই বলছেন, এই বিচার সফলভাবে সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে এক নতুন বার্তা পৌঁছে দিতে পারবে—কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
ইউনূস সরকারের দৃঢ় অবস্থান:
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানবাধিকার ও ন্যায়ের প্রশ্নে অত্যন্ত দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। এই সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে,
“২০২৪ সালের গণজাগরণ ও উত্থানের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাই এই সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।”
উপসংহার: জাতির অপেক্ষা একটি ন্যায়সঙ্গত রায়ের:
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুধু একজন ব্যক্তির নয়, এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং মানবতার পক্ষে এক লড়াই। জাতি এখন অপেক্ষা করছে—এই বিচার যেন দ্রুততম সময়ে, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়।
ফরমাল চার্জ গঠনের মধ্য দিয়ে যে যাত্রা শুরু হয়েছে, তার শেষ গন্তব্য যেন হয় একটি ন্যায়সঙ্গত ও ঐতিহাসিক রায়।