আইফোন কেনার টাকার জন্য অপহরণ ও ধর্ষণ নাটক: রূপগঞ্জে কলেজছাত্রীসহ দুই সহপাঠী আটক!
Finix News Desk| নারায়ণগঞ্জ | ২৪ জুলাই ২০২৫
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মোবাইল ফোন কেনার অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে নিজের অপহরণ ও ধর্ষণ নাটক সাজিয়েছেন মাহিয়া আক্তার নামের এক কলেজছাত্রী। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তার দুই সহপাঠী, সিফাত মিয়া ও সিনথিয়া আক্তারকে আটক করেছে পুলিশ।
ঘটনার শুরু সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল পোস্ট থেকে:
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত বুধবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে মুড়াপাড়া কলেজের এক ছাত্রীকে অপহরণ ও গণধর্ষণ করা হয়েছে। ওই ছাত্রীর পরিবার থানায় একটি অপহরণের অভিযোগও দায়ের করে।
তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্তে নামে পুলিশ। কিন্তু বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন, এই ঘটনা ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং উদ্দেশ্য ছিল একটি দামী আইফোন কেনার জন্য মুক্তিপণ আদায়।
পরিকল্পিত অপহরণ নাটক, কীভাবে সাজানো হয়েছিল সব কিছু:
ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, মাহিয়া আক্তার বেশ কিছুদিন ধরেই একটি দামি ব্র্যান্ডের আইফোন কিনতে চাইছিলেন। পরিবারের পক্ষ থেকে সেই দাবি পূরণ না হওয়ায় সে এক চমকপ্রদ পরিকল্পনা করে।
ঘটনার দিন মঙ্গলবার সকালে মাহিয়া কলেজে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন। এরপর সহপাঠী সিফাত মিয়া ‘অপহরণকারী’ সেজে মাহিয়ার মাকে ফোন দিয়ে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। টাকা না দিলে মেয়েকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়।
‘অচেতন’ নাটকের অংশ হিসেবে সিরাপ খেয়ে পরে থাকেন কলেজের পেছনে:
পরদিন, বুধবার মাহিয়া তার বান্ধবী সিনথিয়া আক্তারের বাসায় অবস্থান করেন। টাকা না পেয়ে নাটকীয়তার অংশ হিসেবে তিনি তুষকা সিরাপ খেয়ে নিজেকে অচেতন দেখান এবং কলেজের পেছনে পড়ে থাকেন। পরে সিফাত ফোন করে মাহিয়ার মাকে বলে,
“টাকা না দেওয়ায় মেয়েকে রেখে গেলাম।”
পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় মাহিয়াকে উদ্ধার করে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে পাঠানো হয় নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য।
পুলিশের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ ও আইনি কার্যক্রম:
রূপগঞ্জ থানার পুলিশ দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টির পর্দা ফাঁস করে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুই সহপাঠী—সিফাত ও সিনথিয়াকে আটক করা হয়েছে। ওসি তরিকুল ইসলাম জানান:
“ঘটনার মূল কাহিনী বের করে আনতে আমরা প্রযুক্তির পাশাপাশি মানুষের বুদ্ধিমত্তাকেও কাজে লাগিয়েছি। অভিযুক্তদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সামাজিক প্রতিক্রিয়া: ‘সচেতনতার অভাব ও মোবাইল আসক্তির চরম বহিঃপ্রকাশ’:
স্থানীয় নাগরিক ও শিক্ষাবিদরা এই ঘটনায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন,
“এই ঘটনা প্রমাণ করে, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে প্রযুক্তিপণ্য ও সামাজিক মিডিয়া ঘিরে অবাস্তব আকাঙ্ক্ষা ও অবিবেচক আচরণ কীভাবে ভয়াবহ মাত্রা নিচ্ছে।”
একজন স্থানীয় শিক্ষক জানান,
“এটা শুধু অপরাধ নয়, এটা সমাজে নৈতিক শিক্ষার অভাব এবং পারিবারিক বন্ধনের দুর্বলতার প্রতিফলন।”
ফেইসবুক, টিকটকের কালচারে প্রভাবিত হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা:
অনেকে অভিযোগ করছেন, বর্তমান তরুণ সমাজ মোবাইল ফোন, টিকটক বা ফেসবুকের কারণে অসাধু পন্থায় অর্থ অর্জনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে:
- অভিভাবকদের দায়িত্ব নিতে হবে
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নৈতিকতা শিক্ষার উপর জোর দিতে হবে
- সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে
শেষ কথা: সচেতনতা ও সজাগ দৃষ্টি প্রয়োজন:
এই ঘটনাটি আমাদের সমাজে কিশোর-কিশোরীদের মানসিকতা, চাহিদা ও প্রযুক্তিপণ্যের আসক্তি নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করছে। পুলিশের তৎপরতায় অপরাধীরা শনাক্ত হয়েছে, কিন্তু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে এখনই।
এই রিপোর্টটি সামনে রেখে প্রত্যেক পরিবার, শিক্ষক ও সমাজকর্মীর উচিত সন্তানদের প্রতি যত্নশীল, মনোযোগী ও সংবেদনশীল হওয়া। প্রযুক্তির উপকারের সঙ্গে সঙ্গে যেন তা অপব্যবহার হয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংস না করে ফেলে—সেদিকে আমাদের সচেতন দৃষ্টি দিতে হবে।
📢 Finix News – সত্য বলার সাহস
🌐 www.finixnews.com
🔗 আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া লিংক:
✅ সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন ও মন্তব্য করুন। আপনার মতামতই আমাদের শক্তি।
📲 Finix News | সত্যের সঙ্গে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।