Sunday, July 20, 2025
Homeবাংলাদেশজাতীয়জামায়াত ক্ষমতায় গেলে জনগণের মালিক নয়, সেবক হবে: শফিকুর রহমান

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে জনগণের মালিক নয়, সেবক হবে: শফিকুর রহমান

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে জনগণের মালিক নয়, সেবক হবে: শফিকুর রহমান।

🕔 প্রকাশিত: ১৯ জুলাই ২০২৫, সন্ধ্যা ৭:৩০
✍  Finix News Desk : ঢাকা

ক্ষমতায় গেলে জনগণের সেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে জামায়াতে ইসলামী, এমন অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, “আমরা আর সেই পুরনো রাজনীতি চাই না, যেখানে জনপ্রতিনিধিরা জনগণের মালিক বনে যান। আমরা চাই গণতন্ত্র ও ন্যায়ের ভিত্তিতে পরিচালিত একটি নতুন বাংলাদেশ।”

ছবি: সংগৃহিত | জামায়াত ক্ষমতায় গেলে জনগণের মালিক নয়, সেবক হবে: শফিকুর রহমান
ছবি: সংগৃহিত | জামায়াত ক্ষমতায় গেলে জনগণের মালিক নয়, সেবক হবে: শফিকুর রহমান

শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জাতীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এ সমাবেশে সারাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। এটিই ছিল জামায়াতে ইসলামীর ঢাকায় প্রথমবারের মতো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় পরিসরের আয়োজন।


দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা:

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে কোনো মন্ত্রী বা সংসদ সদস্য দুর্নীতিতে জড়াবে না, সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পদ মনে করবে না। যারা নির্বাচিত হবেন, তারা সরকারি প্লট, শুল্কমুক্ত গাড়ি, বা রাষ্ট্রীয় সুবিধা গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন।”

তিনি আরও বলেন, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের আরেকটি যুদ্ধ শুরু হবে। আমরা বিশ্বাস করি, দেশের যুব সমাজ ও তারুণ্য শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে সেই যুদ্ধে বিজয় অর্জন সম্ভব।”


অসুস্থ হয়েও বক্তব্য চালিয়ে যান শফিকুর:

বিকাল ৫টার দিকে সভাপতির বক্তব্য দিতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন জামায়াত আমির। এক পর্যায়ে তিনি মঞ্চে লুটিয়ে পড়েন। তবে কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর তিনি আবার উঠে বক্তব্য দেন। পরে অসুস্থতা সত্ত্বেও মঞ্চে বসে তিনি বক্তব্য শেষ করেন। তার এই দৃঢ় মনোবল উপস্থিত জনতাকে আবেগাপ্লুত করে তোলে।

অনেকেই এই দৃশ্য দেখে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে যান এবং দোয়া করেন।


শহীদদের স্মরণ ও আত্মত্যাগের চেতনা:

বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমার আফসোস, ২০২৪ সালে যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জীবন দিয়েছে, আমি তাদের একজন হতে পারলাম না। আমি চাই, ইনসাফের ভিত্তিতে নতুন দেশ গড়ার লড়াইয়ে আমিও যেন শহীদ হতে পারি।”

তিনি আবেগভরে আরও বলেন, “আবু সাঈদরা যদি বুক পেতে না দাঁড়াতেন, তাহলে হয়তো আজকের বাংলাদেশ আমরা দেখতাম না। তাদের আত্মত্যাগ জাতিকে পথ দেখিয়েছে, আমাদের দায়িত্ব সেই চেতনাকে সামনে এগিয়ে নেওয়া।”


নতুন ব্যবস্থার কথা:

শফিকুর রহমান আরও বলেন, “বাংলাদেশ আর পুরনো ব্যবস্থায় চলবে না। যে ব্যবস্থায় বৈষম্য, দুর্নীতি, অবিচার প্রাত্যহিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেই কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। আমরা এমন এক রাষ্ট্র গড়তে চাই, যেখানে সব শ্রেণির মানুষ সম্মান ও নিরাপত্তা পাবে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “শিশু, কিশোর, যুবক, মা-বোন, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, ছাত্র – সবাইকে নিয়ে এমন একটি দেশ গড়তে চাই, যেখানে সংবিধান সকলের অধিকার নিশ্চিত করবে।”


সোহরাওয়ার্দীতে প্রথমবার জামায়াতের সমাবেশ:

অতীতে জামায়াতের সমাবেশগুলো মূলত পুরানা পল্টন বা বায়তুল মোকাররম এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। তবে এই প্রথমবারের মতো ঢাকার কেন্দ্রস্থল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলটি বড় পরিসরে সমাবেশ করেছে। এতে ব্যাপক জনসমাগম হয়, যা সংগঠনের পুনর্গঠনের ইঙ্গিত দেয় বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।


অন্যান্য দলের অংশগ্রহণ:

এই সমাবেশে জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা অংশ নেন এবং সংহতি প্রকাশ করেন। বক্তৃতা দেন:

  • জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন
  • গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর
  • ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনূস আহমদ
  • জাগপা’র মুখপাত্র রাশেদ প্রধান
  • জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক
  • কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ
  • নেজামে ইসলামী পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার
  • জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা – এ টি এম আজহারুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ মো. তাহের, মিয়া গোলাম পরওয়ার, নুরুল ইসলাম বুলবুল, মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন প্রমুখ

সভাপতির বক্তব্য ও অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ এবং উত্তরের সেক্রেটারি রেজাউল করিম।


সাত দফা দাবি তুলে ধরেছে জামায়াত:

সমাবেশে জামায়াত সাত দফা দাবি তুলে ধরে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • সব গণহত্যার বিচার
  • পিআর পদ্ধতিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন
  • জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা
  • দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় প্রতিশ্রুতি
  • নতুন সংবিধান প্রণয়নের আহ্বান

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে যেভাবে দুর্নীতিমুক্ত ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা এসেছে, তা নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে। সংগঠনের আমির শফিকুর রহমানের বক্তব্যে জনগণের কাছে একটি সেবা-ভিত্তিক রাজনীতির প্রতিশ্রুতি ছিল স্পষ্ট।

জামায়াতের রাজনৈতিক অবস্থান ও ভবিষ্যৎ কৌশল কতটা কার্যকর হয়, তা সময়ই বলে দেবে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত, রাজনৈতিক অঙ্গনে তারা নিজেদের অবস্থান পুনরুদ্ধারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।


সংক্ষিপ্ত সারাংশ:
সোহরাওয়ার্দীতে অনুষ্ঠিত প্রথম সমাবেশে জামায়াত আমির শফিকুর রহমান দুর্নীতিমুক্ত ও ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেন। জনগণের সেবক হয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি পুরনো ব্যবস্থার পরিবর্তনের ডাক দেন তিনি।


প্রস্তুত করেছে: Finix News রিপোর্টিং ডেস্ক
তথ্য উৎস: মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদক ও সমাবেশ কাভারেজ


📣 আরও পড়ুন:


📢 আরও রাজনৈতিক আপডেট ও বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ পেতে চোখ রাখুন Finix News-এ।
📨 যোগাযোগ: [email protected]

আরও পড়ুন | Read More
আরও পড়ুন | Read More...

সর্বাধিক পঠিত | Popular Post