Friday, July 18, 2025
Homeপশ্চিমবঙ্গইয়েমেনে ভারতীয় নার্সের মৃত্যুদণ্ড: নিহতের পরিবার বলছে ক্ষমার সুযোগ নেই।

ইয়েমেনে ভারতীয় নার্সের মৃত্যুদণ্ড: নিহতের পরিবার বলছে ক্ষমার সুযোগ নেই।

ইয়েমেনে ভারতীয় নার্সের মৃত্যুদণ্ড, নার্স নিমিশা প্রিয়ার মুক্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ, নিহতের পরিবার ‘ক্ষমাহীন’ অবস্থানে অনড়।

Finix News Desk – International | 18 July 2025
নিহতের পরিবার বলছে  “প্রাণের বদলে প্রাণ চাই”

ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়া কে ইয়েমেনে এক হত্যাকাণ্ডের দায়ে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড আপাতত স্থগিত করা হলেও, নিহত তালাল আব্দো মাহদির পরিবার সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তারা কোনো ধরনের সমঝোতা বা ‘ব্লাড মানি’ মেনে নেবে না। শুধু মাত্র ‘কিসাস’, অর্থাৎ ভারতীয় নার্সের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলেই তারা ন্যায়বিচার হয়েছে বলে মনে করবেন।


হত্যাকাণ্ডের পেছনের ঘটনা:

ইয়েমেনে ভারতীয় নার্সের মৃত্যুদণ্ড: ক্ষমার সুযোগ নেই।
ছবি: সংগৃহীত | নিমিশা প্রিয়া (বাঁয়ে), আব্দেলফাতাহ্ মাহদি (ডানে) | ইয়েমেনে ভারতীয় নার্সের মৃত্যুদণ্ড: ক্ষমার সুযোগ নেই।

২০১৭ সালে ইয়েমেনের সানা শহরে জলাধার থেকে উদ্ধার করা হয় ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়া-র ব্যবসায়িক অংশীদার তালাল মাহদি-র খণ্ড-বিখণ্ড দেহ। অভিযোগ অনুযায়ী, প্রিয়া তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যা করেন এবং পরে মৃতদেহ কেটে একটি ট্যাংকে ফেলে দেন। তবে নিমিশার দাবি, তিনি শুধু তার পাসপোর্ট উদ্ধার

করতে তালালকে অচেতন করতে চেয়েছিলেন, ভুল করে বেশি মাত্রায় ওষুধ দেওয়া হয়।

এরপরই ইয়েমেনের আদালতে এই নার্সের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয় এবং ২০২০ সালে ভারতীয় নার্সের মৃত্যুদণ্ড রায় দেওয়া হয়। ২০২৩ সালে সুপ্রিম কোর্টেও সেই রায় বহাল থাকে।


মৃতের ভাইয়ের মুখে ক্ষোভ ও প্রতিশোধের ঘোষণা:

তালাল মাহদির ভাই আব্দেলফাতাহ মাহদি, বিবিসি অ্যারাবিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন:

“আমাদের পরিবারের উপর একটা বর্বর ও জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ইসলামিক শরিয়া অনুযায়ী ‘কিসাস’ মানেই একমাত্র ন্যায়বিচার।”

তিনি আরও বলেন, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এই ঘটনাকে ‘নিমিশা প্রিয়া একজন নির্যাতিত নারী’ হিসেবে তুলে ধরছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং জনমত প্রভাবিত করার অপচেষ্টা।


ব্লাড মানির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিল পরিবার:

নিমিশার পরিবার এবং একাধিক মানবাধিকার সংগঠন ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের ব্লাড মানি (রক্তের মূল্য) দিতে চেয়েছে মাহদির পরিবারকে। এই অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে ‘সেইভ নিমিশা প্রিয়া অ্যাকশন কাউন্সিল’ এর মাধ্যমে। তবে মাহদি পরিবার এই প্রস্তাব স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।

আব্দেলফাতাহ বলেন,

“আমরা রক্ত নিয়ে ব্যবসা করব না। আমরা কোনো চাপে মাথা নত করব না।”


ভারতের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা:

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, এই মামলাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং সরকার নিয়মিত ইয়েমেনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তারা নিমিশার পরিবারকে আইনি সহায়তা, কূটনৈতিক সাক্ষাৎ এবং আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে পাশে দাঁড়িয়েছে।

তবে মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্লেষকরা বলছেন, ইয়েমেনে ভারতের কূটনৈতিক প্রভাব কম হওয়ায় এই বিষয়ে কার্যকর হস্তক্ষেপ করা ভারতের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।


‘কিসাস’ কী এবং এর বৈধতা:

ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী ‘কিসাস’ হল অপরাধের সমপরিমাণ শাস্তি। একজনকে ইচ্ছাকৃত হত্যা করলে, তার বদলে অপরাধীকেও প্রাণদণ্ড দেওয়া ইসলামি ন্যায়বিচারের অংশ। তবে ভুক্তভোগী পরিবার চাইলে ক্ষমাও করতে পারে। কিন্তু মাহদির পরিবার বারবার জানিয়েছে, তারা এই পথে যাবে না।

আইনজীবী মুফতি ওসামা নদভি ব্যাখ্যা দেন,

“কিসাস কুরআনের আইন। শরিয়া চালু না থাকলে এই আইন কার্যকর করা সম্ভব নয়।”


নিমিশার পরিবারের মরিয়া চেষ্টা:

নিমিশার মা, প্রেমা কুমারী, একজন গৃহপরিচারিকা। মেয়ের প্রাণ বাঁচাতে তিনি বহু বছর ধরে ইয়েমেনে অবস্থান করছেন। সঙ্গে আছেন সমাজকর্মী স্যামুয়েল জেরোম এবং আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘সেইভ নিমিশা প্রিয়া’। তারা নানা দেশ থেকে ক্রাউডফান্ডিং এর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে আদালতের কাছে আবেদন করে যাচ্ছেন।

তবে এখন পর্যন্ত ইয়েমেন সরকার শুধুমাত্র মৃত্যুদণ্ড স্থগিত রেখেছে, বাতিল করেনি।

নিমিশা প্রিয়ার জীবন এখন এক সুতোয় ঝুলছে। যদিও ভারত সরকার ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে, নিহতের পরিবার অনড় অবস্থানে থেকে কেবল ‘প্রাণের বদলে প্রাণ’ চায়। ইয়েমেনি আইনে তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সুতরাং ভারতীয় নার্সের মৃত্যুদণ্ড রায় স্থগিত সম্ভাবনা আপাতত অন্ধকারেই রয়ে গেল।


📌 সম্পর্কিত সংবাদ:

সোর্স বিবিসি বাংলা..

📢 Finix News – সত্য বলার সাহস
🌐 www.finixnews.com

আরও পড়ুন | Read More
আরও পড়ুন | Read More...

সর্বাধিক পঠিত | Popular Post