স্ত্রী কিডনি জীবন দিয়ে দিলেন, পেলেন প্রতারণা: টুনির গল্পে নাড়িয়ে দিল দেশ।
Finix News ডেস্ক | সাভার, বাংলাদেশ
একদিকে ভালোবাসার বিসর্জন, অন্যদিকে প্রতারণার নির্মম চিত্র, এই দ্বৈত রূপেই ধরা দিয়েছে উম্মে সাহেদীনা টুনির জীবন। স্বামীর জীবন স্ত্রীর কিডনি দিয়ে বাছলেও স্বামী মো. তারেক এখন প্রেমিকার। সুস্থ হয়ে ওঠার পর তারেকই পরিণত হন টুনির দুঃস্বপ্নে। টুনির অভিযোগ, পরকীয়া, অনলাইন জুয়া এবং নির্যাতনের ফাঁদে পড়ে ভেঙে গেছে তার স্বপ্নের সংসার।
স্বপ্নের শুরু, দুঃস্বপ্নের শেষ:
২০০৬ সালে মালয়েশিয়া প্রবাসী তারেকের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় কলেজছাত্রী টুনির। ২০০৭ সালে সন্তানের জন্ম, আজমাইন দিব্য। কিন্তু ২০০৮ সালেই জানা যায়, তারেকের দুটি কিডনিই অচল। স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে ভারতে গিয়ে দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে নিজের একটি কিডনি দান করেন টুনি।
টুনি বলেন, “আমি আইসিইউ থেকে উঠেই দেখলাম, যাকে বাঁচাতে নিজের শরীর কাটলাম, সে-ই আমার উপর চিৎকার করছে। চিকিৎসকরাও বিস্মিত হয়ে বলেন—তুমি যার জন্য বেঁচে আছো, তার সঙ্গে এমন ব্যবহার কেন?”
স্বামীর অমানবিক রূপ:
দেশে ফিরে আসার পর ভালোবাসার বদলে শুরু হয় অবহেলা। তারেক জড়িয়ে পড়েন অনলাইন জুয়ায় ও ডিভোর্সি নারী তাহমিনার সঙ্গে পরকীয়ায়। টুনি যখন মুখ খোলেন, তখন তার উপর নেমে আসে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঝড়।
স্বামীর কথায়, টুনি যেন ‘অর্থের যন্ত্র’। একপর্যায়ে বাড়ি বিক্রির জন্য চাপ, এরপর মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় তাঁকে।
আইনের দ্বারে টুনি, প্রতারণার পথেই তারেক:
২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সাভার থানায় তারেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন টুনি। কৌশলে তারেক অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য করেন। কিন্তু টুনি হাল ছাড়েননি। পরবর্তীতে আদালতে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা করলে তারেক এক মাস কারাগারে থাকেন।
তবে ৪ জুন জামিনে মুক্তি পেয়ে সরাসরি তাহমিনার বাড়িতে গিয়ে ওঠেন তারেক। এখন সেখান থেকেই টুনির নামে থাকা সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন।
তারেক পলাতক, পরিবার নীরব:
তারেক বর্তমানে আত্মগোপনে। মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছেন। এমনকি আইনজীবী ও পরিবার-পরিজনেরাও মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
টুনির আকুতি: ‘আমি ন্যায়বিচার চাই’:
টুনি বলেন, “আমি জীবনের সব দিয়ে ওকে বাঁচিয়েছি। এখন সে আমাকে কাগজে-কলমে শেষ করে দিতে চায়। আমি চাই দেশের মানুষ জানুক, এই ভালোবাসার বিনিময়ে আমি কী পেয়েছি।”
মানবাধিকার সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ:
এই ঘটনাটি শুধুই একটি পারিবারিক কলহ নয়, এটি নারীর আত্মত্যাগ, বিশ্বাস ভঙ্গ ও অধিকার হরণের করুণ দলিল। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উচিত দ্রুত এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা।
Finix News-এর আবেদন:
এই ধরনের ঘটনা যেন আর কোনো নারীকে না ছুঁয়ে যায়, সেই প্রত্যাশায় Finix News প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। টুনির মতো নারীদের পাশে দাঁড়াতে হবে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে।
আরও পড়ুন..