“আমার ছেলের কি দোষ ছিল?” শহীদ আবু সাঈদের মায়ের কান্না জাতির বিবেক নাড়া দেয়।
ফিনিক্স নিউজ : রংপুর
“আমার ছেলের কি দোষ ছিল! সে তো কোনো দোষ করেনি। কিন্তু গুলি করে আমার বাচ্চাকে মাটি ফেলেছে। এক বছর হয়ে গেলেও এখনো বিচার হয় নাই। আমরা কোনো চাওয়া নাই, যারা খুন করেছে, তাদের যেন বিচার হয়।” – এমনই হৃদয়বিদারক আর্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন শহীদ আবু সাঈদের মা, ছেলের স্মৃতিচারণ করতে করতে কেঁপে ওঠা কণ্ঠে, চোখে অশ্রু। সময় থমকে গেছে তাঁর কাছে, আর রাষ্ট্র যেন নিরব।
একটি ছবির গভীরে লুকানো শত বেদনার ভাষা:
এই প্রতিবেদনটির মূল অনুপ্রেরণা একটি ছবি, একজন শোকার্ত মা দাঁড়িয়ে আছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে, যেখানে তাঁর ছেলে আবু সাঈদ শহীদ হন। কাঠের ব্যারিকেডে ছেলের নাম লেখা প্ল্যাকার্ডের দিকে তাকিয়ে কাঁপা হাতে কিছু স্পর্শ করছেন তিনি। চারপাশে মানুষের ভিড় নেই, নেই মিডিয়ার ফ্ল্যাশ, তবু ছবিটা চিৎকার করে যেন বলে উঠে – “বিচার কই?”
📅 এক বছর আগের নির্মমতা:
২০২৪ সালের ১৬ জুলাই, বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামে। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছিল অন্যতম কেন্দ্র। সেই দিনেই শহীদ হন আবু সাঈদ, একজন নিরস্ত্র ছাত্র, যিনি সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শুধুই প্রতিবাদের ভাষা নিয়ে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তিনি ফাঁকা হাতে পুলিশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, পিছনে অসংখ্য শিক্ষার্থী। হঠাৎই পুলিশ গুলি চালায়। গুলি লাগে তাঁর বুকে। তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
📣 মায়ের চোখে বিচারহীনতা:
আজ এক বছর পার হলেও শহীদ আবু সাঈদের মা বিচার পাননি। তিনি চান না ক্ষমতা, চান না কোনো সুবিধা, তাঁর কণ্ঠে শুধুই প্রতিশোধ নয়, ন্যায়বিচারের আকুতি।
তিনি বলেন,
“আমি চাই, কেউ যেন এমন মায়ের কোল খালি না করে। আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি, তার একটাই দোষ, সে ন্যায়ের জন্য দাঁড়িয়েছিল। আজও বিচার হয়নি। বিচার চাই।”
🧭 কেন এই প্রতিবাদ ভিন্ন রকম?
বাংলাদেশে অনেক আন্দোলন হয়, অনেক মৃত্যু হয়। কিন্তু আবু সাঈদের মৃত্যু শুধু একটা রাজনৈতিক ঘটনার পরিণতি নয়, এটি একটি মানবিক প্রতিক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
কারণ:
- সে নিরস্ত্র ছিল।
- তার মৃত্যু ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ হয়।
- তার মায়ের কান্না যেন গোটা জাতির মাতৃকণ্ঠ হয়ে ওঠে।
🧩 বিচার প্রক্রিয়া: থমকে আছে নাকি থামিয়ে রাখা হয়েছে?
বর্তমানে শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় একটি মামলা চলমান রয়েছে। তবে তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশ সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ছাত্রলীগের কিছু নেতা। কিন্তু মায়ের অভিযোগ, তদন্ত ইচ্ছাকৃতভাবে ধীরগতির করা হচ্ছে।
তিনি বলেন,
“ওরা জানে যে দোষী কারা। কিন্তু এক বছরেও কোনো বিচার হলো না! এভাবে কতদিন বাঁচা যায়?”
🌍 জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, UNHRC প্রাথমিকভাবে ঘটনার নিন্দা জানায়।
তারা বলেন, “বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই বিচার নিশ্চিত করতে হবে, নতুবা এটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্পষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকবে।”
📚 একজন ছাত্র থেকে প্রতীকে রূপান্তর:
আবু সাঈদ এখন আর শুধুমাত্র একজন শিক্ষার্থী নন – তিনি এখন প্রতীক।
যুবকদের চোখে, মা-বাবার দোয়ায়, জাতির বিবেকের প্রতিচ্ছবিতে, তিনি বেঁচে আছেন।
তাঁর মা জানান,
“সাঈদের বন্ধু এখনো আসে। ওদের দেখে আমার বুকটা আরও কাঁদে। ও বলতো, মা তুমি খালি কষ্ট পাও না। আমি একদিন এমন কিছু করব, যাতে সবাই তোমাকে চিনবে। সে সত্যিই আমাকে পরিচিত করে দিল, কিন্তু এ কেমন পরিচয়!”
📷 ছবির শক্তি: প্রতিবাদের ভাষা:
এই প্রতিবেদন যে ছবিকে কেন্দ্র করে লেখা, তা ছিল একজন মা এবং তার সন্তানের প্রতি অসমাপ্ত ন্যায়ের আলেখ্য। ছবি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, নীরবতা কখনো কখনো সবচেয়ে তীব্র প্রতিবাদ হতে পারে।
সময় কী বিচার দেবে?
আবু সাঈদের মৃত্যু এক বছরের বেশি সময় পার করে ফেলেছে, কিন্তু তার মায়ের কান্না থামেনি। তিনি কাঁদেন না শুধু নিজের সন্তানের জন্য, তিনি কাঁদেন রাষ্ট্রের ন্যায়ের জন্য।
এটা শুধু আবু সাঈদের জন্য নয়, এটা সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক প্রতিজ্ঞা, যে আমরা ভুলে যাব না, ক্ষমা করব না, যতক্ষণ না ন্যায় প্রতিষ্ঠা হয়।
📌 ফিনিক্স নিউজ বার্তা:
আপনি কি বিচার চান?
আপনি কি চান এই মা যেন আর কাউকে হারাতে না দেখে?
তবে প্রশ্ন তুলুন, আওয়াজ তুলুন। কারণ নীরবতা হত্যাকারীদের পক্ষ নেয়।
🖋️ রিপোর্ট ও গবেষণা: ফিনিক্স নিউজ ডেস্ক
📸 ছবি সৌজন্যে: পাঠক-প্রেরিত | রংপুর, ২০২৫