Sunday, July 20, 2025
Homeউত্তরবঙ্গরংপুর গ্যাস বিস্ফোরণ: সিও বাজারে নিহত ১, আহত ১৩

রংপুর গ্যাস বিস্ফোরণ: সিও বাজারে নিহত ১, আহত ১৩

রংপুর গ্যাস বিস্ফোরণ: এলপিজি গ্যাস বিস্ফোরণে রংপুরের সিও বাজার কেঁপে উঠল: নিহত ১, আহত ১৩।

Finix News Desk | তারিখ: শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫ | স্থান: রংপুর

আজ দুপুরে রংপুর শহরের ব্যস্ততম এলাকা সিও বাজারে মেসার্স সিও বাজার এলপিজি অটো গ্যাস অ্যান্ড কনভার্সন সেন্টারে এক ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে একজন নিহত ও অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণের তীব্রতায় এলাকার ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও যানবাহন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


রংপুর গ্যাস বিস্ফোরণ: সিও বাজারে নিহত ১, আহত ১৩
ছবি: সংগৃহিত | রংপুর গ্যাস বিস্ফোরণ।

বিস্ফোরণের মুহূর্ত: আতঙ্ক ছড়ালো চারদিকে:

আজ শনিবার দুপুর আনুমানিক ১২টা ৩০ মিনিটের দিকে বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে রংপুর শহরের সিও বাজার। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং চারদিকে কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে যায়।

ঘটনাস্থলে অবস্থানরত বাস, প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল আরোহীরা দিগ্বিদিক ছুটতে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, ঘটনার সময় গ্যাস স্টেশনে একটি চলন্ত বাস, দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি ও ১০টির বেশি অ্যাম্বুলেন্স অপেক্ষা করছিল। বিস্ফোরণের পর সেগুলোর বেশ কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


নিহত ও আহতের পরিচয়:

বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হন, যার নাম সেলিম রেজা আড়ঙ্গ। তিনি মেসার্স সিও বাজার এলপিজি গ্যাস স্টেশনের একজন সহকারী ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

আহত ১৩ জনের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। তাদের তাৎক্ষণিকভাবে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রমেক) ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী ও যানবাহনের যাত্রীরাও রয়েছেন।


ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসনের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ:

রংপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক বাদশা মাসউদ আলম বলেন, “খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় আমাদের কয়েকটি ইউনিট। আমরা দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি এবং আহতদের উদ্ধারে অভিযান চালাই।”

তিনি আরও জানান, বিস্ফোরণের উৎস এবং গ্যাস লাইনের ত্রুটির সম্ভাব্য কারণ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এখনও অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।


আশেপাশের এলাকা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ:

সিও বাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় বিস্ফোরণের প্রভাব আশেপাশের বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে গিয়ে পড়ে। অন্তত ২০টি দোকান ও ১৫টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমার বাড়ির সব থাই গ্লাস ভেঙে গেছে, দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। এমন বিস্ফোরণ জীবনে প্রথম দেখলাম।”

বিভিন্ন গাড়ির জানালার কাচ ভেঙে গেছে, কিছু গাড়ি আংশিকভাবে পুড়ে গেছে। রাস্তায় পড়ে থাকা ধ্বংসাবশেষ সরাতে বিকেল পর্যন্ত কাজ করেছে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা।


যান চলাচলে বিঘ্ন, ঘিরে ফেলা হয় এলাকা:

বিস্ফোরণের পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে এবং এলাকা অবরুদ্ধ করে ফেলে। সাময়িকভাবে ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা আশেপাশের সকল দোকান, অফিস ও বাসাবাড়ি খালি করে দিয়েছি। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে।”


প্রশাসনের সতর্ক বার্তা:

রংপুর জেলা প্রশাসক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং মর্মান্তিক ঘটনা। নিরাপত্তার স্বার্থে এলাকাবাসীকে সিও বাজারের আশেপাশে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং দোষীদের খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


বিস্ফোরণের কারণ নিয়ে তদন্ত:

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এলপিজি সরবরাহ লাইনে কোনো লিকেজ থেকেই এ বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশনের (পেট্রোবাংলা) একটি তদন্ত দল আজ বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।


স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ:

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এলপিজি গ্যাস পাম্প ও গ্যাস চালিত যানবাহনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, “প্রতিদিন এই গ্যাস পাম্পে শত শত গাড়ি আসে। কিন্তু সঠিক নিরাপত্তা নেই। এটা তো সময়ের ব্যাপার ছিল।”

অনেকে গ্যাস পাম্প সরিয়ে আবাসিক এলাকা থেকে দূরে স্থানান্তরের দাবি তুলেছেন।


ঘটনাস্থলের চিত্র:

বিস্ফোরণের পরবর্তী ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু ছবিতে দেখা যায়, ছিন্নভিন্ন গাড়ির অংশ, পোড়া মাটির স্তূপ ও কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন চারদিক।


করণীয় ও প্রতিকার:

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে গ্যাস পাম্পগুলোতে আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।

  • এলপিজি লিকেজ ডিটেক্টর ব্যবহার
  • নিয়মিত পাইপলাইন ইন্সপেকশন
  • প্রশিক্ষিত টেকনিক্যাল স্টাফ
  • অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র প্রস্তুত রাখা
  • সিসিটিভি মনিটরিং বৃদ্ধি
  • স্থানীয় জনগণকে নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ প্রদান

সিও বাজারের এই বিস্ফোরণ শুধু রংপুরবাসীর নয়, বরং পুরো দেশের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা। এ ঘটনা প্রমাণ করে, গ্যাস ও দাহ্য পদার্থ সংরক্ষণ ও ব্যবহারে সামান্য অবহেলাও কতটা প্রাণঘাতী হতে পারে।

যথাযথ তদন্ত, দোষীদের শাস্তি এবং গ্যাস স্টেশনগুলোর নিরাপত্তা মান বাড়াতে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।


📣 আরও পড়ুন:


📢 আপনিও যদি পাখির মতো কোনো সংগ্রামী শিক্ষার্থীর গল্প জানেন, আমাদের সঙ্গে শেয়ার করুন: [email protected]

📲 এমনই সত্য অনুপ্রেরণার গল্প পেতে চোখ রাখুন: www.finixnews.com

আরও পড়ুন | Read More
আরও পড়ুন | Read More...

সর্বাধিক পঠিত | Popular Post