ইরান ইজরাইল যুদ্ধে ড. ইউনূস’কে কি বার্তা দিলো খোমেনি।

ভারত-মিয়ানমার কিংবা ইসরায়েল-ইরান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়?

Finix News Analysis Desk | ২১ জুন ২০২৫ | ঢাকা

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হলেও এর প্রতিরক্ষা কাঠামো ও সামরিক সক্ষমতা এখনো উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে। ড. ইউনূস কি পারবেন? দেশের সামরিক বাহিনী প্রধানত ভূখণ্ড রক্ষা, শান্তিরক্ষা মিশন এবং জাতীয় নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত। তবে আধুনিক যুদ্ধের বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠছে—যদি হঠাৎ করে ভারতের মতো শক্তিধর প্রতিবেশী কিংবা রোহিঙ্গা ইস্যুতে উত্তপ্ত মিয়ানমারের সঙ্গে সংঘাত বাধে, তাহলে বাংলাদেশের কী পরিণতি হতে পারে?

বিশ্বের প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতির আলোকে বাংলাদেশ যদি এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, তাহলে দেশের সামরিক প্রস্তুতি, যুদ্ধ ক্ষমতা এবং প্রতিরক্ষা কৌশল কতটা কার্যকর হবে—এই বিষয়েই নিচে বিশ্লেষণ করা হলো।

🇧🇩 বাংলাদেশের সামরিক সক্ষমতার বাস্তব চিত্র:

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা কাঠামোতে তিনটি প্রধান বাহিনী রয়েছে—বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনী। তবে এই বাহিনীগুলোর যান্ত্রিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা আধুনিক যুদ্ধের মাপকাঠিতে এখনও সীমিত।

✅ সেনাবাহিনী:

• সদস্য সংখ্যা আনুমানিক ২ লাখ+।
• প্রধানত ম্যানুয়াল ইনফ্যান্ট্রি এবং সীমিত সংখ্যক ট্যাংক ও আর্টিলারি।
• আধুনিক যুদ্ধযন্ত্রের সংখ্যা খুবই সীমিত।
• ইলেকট্রনিক যুদ্ধ বা সাইবার সক্ষমতা প্রায় নেই বললেই চলে।

✅ বিমান বাহিনী:

• প্রধান যুদ্ধবিমান: F-7MB, MiG-29SMT (সংখ্যা অল্প, পুরনো মডেল)।
• উন্নত রাডার ও মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনুপস্থিত।
• আধুনিক মাল্টিরোল ফাইটার জেট বা বোমারু বিমান নেই।
• Drones বা UAV combat system-এর ঘাটতি রয়েছে।

✅ নৌবাহিনী:

• সাবমেরিন: ৩টি চীন থেকে কেনা সাবমেরিন (Type-035G Ming-class), প্রতিরক্ষা সক্ষমতা সীমিত।
• কোনো Aircraft Carrier নেই।
• Anti-ship বা long-range missile defense ব্যবস্থা সীমিত।

❌ পারমাণবিক অস্ত্র:

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, পারমাণবিক অস্ত্র ধারণ বা উৎপাদন নিষিদ্ধ। ফলে, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য পারমাণবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই।

🆚 যুদ্ধ হলে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ:

ভারত দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক পরাশক্তি। তাদের রয়েছে:

• ৪০০০+ যুদ্ধবিমান।
• পারমাণবিক অস্ত্র।
• বেলিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল।
• অত্যাধুনিক বিমানবাহী রণতরী।
• স্পেশাল ফোর্স এবং সাইবার কমান্ড।

যদি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ শুরু হয় (যা রাজনৈতিকভাবে অসম্ভব হলেও একটি হাইপোথেটিকাল বিশ্লেষণ হিসেবে বিবেচিত), তাহলে বাংলাদেশ টিকবে না। ভারত সহজেই দেশের মূল কৌশলগত অবকাঠামো, রাডার স্টেশন, যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হবে।

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা কৌশল তখন হবে:

• সীমান্ত রক্ষা (যতটা সম্ভব)।
• কূটনৈতিকভাবে যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা।
• আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করে ভারতকে থামানো।

🆚 মিয়ানমারের সঙ্গে সংঘাত হলে:

মিয়ানমার সামরিক শাসিত রাষ্ট্র। তাদের আছে:

• Su-30 যুদ্ধবিমান
• মাঝারি রেঞ্জের মিসাইল
• ট্রেনিংপ্রাপ্ত সেনা ও আধুনিক হেলিকপ্টার

বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধ হলে প্রতিরোধ করতে পারবে সীমিত সময়ের জন্য। তবে যদি চীন মিয়ানমারকে সমর্থন করে, তাহলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

🆚 ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের তুলনা:

বর্তমান ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ হলো উন্নত প্রযুক্তি, মিসাইল, ড্রোন ও স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত যুদ্ধ। যেখানে একদিকে ইসরায়েল এরো ডিফেন্স সিস্টেমে সজ্জিত, অন্যদিকে ইরানের হাতে আছে Shahed drones, cruise ও ballistic missiles।

বাংলাদেশের হাতে এ ধরণের কোনো missile deterrence, air defense system বা strike capability নেই।

সেক্ষেত্রে, যদি বাংলাদেশ এমন একটি “high-intensity modern warfare”-এর মধ্যে পড়ে, তাহলে আকাশ পথ থেকেই পুরো শহর ধ্বংস করা সম্ভব হয়ে যাবে প্রতিপক্ষের জন্য।

✅ বাংলাদেশের শক্তি কোথায়?

• জনগণের মনোবল: ১৯৭১ সালে সীমিত অস্ত্রেও বাংলাদেশ যুদ্ধ জিতেছে; ফলে জনসমর্থন বড় শক্তি।
• আন্তর্জাতিক কূটনীতি: বাংলাদেশ বর্তমানে শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত, যা তাকে UN ও আন্তর্জাতিক মহলে সহানুভূতি এনে দেয়।
• ভৌগোলিক বাস্তবতা: যুদ্ধ দীর্ঘ হলে প্রতিপক্ষের জন্য রসদ ও সময় ব্যয় হবে বেশি।

বাংলাদেশের সামরিক কাঠামো এখনো রক্ষণাত্মক নীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ। ভারী যুদ্ধ, আকাশ থেকে টার্গেটেড স্ট্রাইক বা পারমাণবিক যুদ্ধের মুখোমুখি হলে বাংলাদেশ অনেকটাই অরক্ষিত। তাই বাংলাদেশের জন্য সেরা কৌশল হচ্ছে—যুদ্ধ নয়, শান্তিপূর্ণ কূটনীতি, আঞ্চলিক বন্ধুত্ব, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এবং সামরিক সক্ষমতার ধীরে ধীরে আধুনিকায়ন।

একইসঙ্গে, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ইলেকট্রনিক ও সাইবার নিরাপত্তা এবং নির্ভরযোগ্য অস্ত্রের মজুদ তৈরি করাই হবে ভবিষ্যতের প্রস্তুতির মূল চাবিকাঠি।

📌 বিশ্লেষণটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন। আরও প্রতিবেদন পড়ুন Finix News-এ।
📧 [email protected] | 🌐 www.finixnews.com