Sunday, July 20, 2025
Homeউত্তরবঙ্গনীলফামারীতে প্রবাসী প্রতারণা চক্রের ভয়ংকর ফাঁদ! ৪ সদস্য গ্রেপ্তার!

নীলফামারীতে প্রবাসী প্রতারণা চক্রের ভয়ংকর ফাঁদ! ৪ সদস্য গ্রেপ্তার!

নীলফামারীতে প্রবাসীদের লক্ষ করে প্রতারণা চক্র: হাউজ বিল্ডিং লোন দেওয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া চক্রের ৪ সদস্য গ্রেপ্তার।

নীলফামারী প্রতিনিধি | Finix News Desk
📅 প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৫, বিকেল ৫:১২

নীলফামারীতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশনের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা করা একটি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চক্রটি সৌদি প্রবাসী এক ব্যক্তির কাছ থেকে বাড়ি তৈরির জন্য লোন দেওয়ার নামে ৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। অভিযানে মোবাইল, সিমকার্ড, বিকাশ অ্যাকাউন্ট ও নগদ অর্থসহ প্রতারণায় ব্যবহৃত নানা সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।


নীলফামারীতে প্রবাসী প্রতারণা চক্রের ভয়ংকর ৪ সদস্য গ্রেপ্তার!
নীলফামারীতে প্রবাসী প্রতারণা চক্রের ভয়ংকর ৪ সদস্য গ্রেপ্তার!

ঘটনার পটভূমি ও গ্রেপ্তার:

নীলফামারী সদর থানা পুলিশের একটি টিম শুক্রবার রাতভর অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। তারা দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশনের (BHBFC) কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের সহজ শর্তে লোন পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভনে অর্থ আত্মসাৎ করছিল।

গ্রেপ্তারকৃতরা:

  • রাকিবুল ইসলাম (২৫) – চাপড়া সরমজানি ইটাপির
  • মশিয়ার রহমান (৩৫) – একই এলাকা
  • মমিন উদ্দিন (২২) – কামারপাড়া
  • ফরিদ (২৪) – বাবরীঝাড় ফকিরপাড়া

কীভাবে প্রতারণা করত চক্রটি?

প্রতারণা চক্রটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যেমন WhatsApp, Facebook Messenger, এবং বিভিন্ন অনলাইন বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে বিদেশি প্রবাসীদের টার্গেট করত। নিজেদের সরকারি কর্মকর্তা পরিচয়ে বলত:

“আপনি প্রবাসে থাকলে বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন থেকে ২ কোটি টাকার পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন, খুব সহজ শর্তে।”

এই লোভনীয় প্রস্তাবে প্রবাসীরা বিশ্বাস করে প্রক্রিয়া বাবদ ২ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা বিকাশ বা ব্যাংক ট্রান্সফার করত। কিন্তু টাকা পাওয়ার পর তারা আর সাড়া দিত না।


নির্দিষ্ট একটি অভিযোগের বিবরণ:

সৌদি আরবে কর্মরত গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার দোপাচালা গ্রামের জাহিদ ইসলাম নামের এক প্রবাসীকে টার্গেট করে চক্রটি। তাকে দুই কোটি টাকার লোন দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে তিনি তার পরিবারকে জানালে, তারা ১৮ জুলাই ২০২৫ তারিখে নীলফামারী সদর থানায় মামলা করেন।


পুলিশের তৎপরতা ও অভিযানের বিবরণ:

মামলার পর নীলফামারী পুলিশ সুপার এ এফ এম তারিক হোসেন খান এর নির্দেশে ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। রাতভর সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযানে জব্দ করা হয়:

  • প্রতারণায় ব্যবহৃত মোবাইল ফোন
  • ল্যাপটপ
  • একাধিক সিমকার্ড
  • বিকাশ অ্যাকাউন্ট পরিচালনায় ব্যবহৃত মোবাইল
  • নগদ ১,১০,০০০ টাকা

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদের মন্তব্য:

এ বিষয়ে অভিযানের নেতৃত্বদানকারী নীলফামারী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ বলেন:

“আমাদের টিম গত দুই রাত ধরে নির্ঘুমভাবে অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের গোপন ডেরায় হানা দেয়। আমরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে লোন দেওয়ার নামে অর্থ আত্মসাৎকারী চক্রের চার সদস্যকে অবৈধ সিম, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, বিকাশ অ্যাকাউন্ট পরিচালনায় ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও নগদ ১ লাখ ১০ হাজার টাকাসহ গ্রেফতার করেছি।”

তিনি আরও বলেন:

“এই চক্রটি মূলতঃ ফেসবুক বুস্টিং করে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের টার্গেট করে থাকে। তারা বড় অংকের হাউজ বিল্ডিং লোন দেওয়ার মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রলোভনে ফেলে, এরপর ধাপে ধাপে নানা অজুহাতে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়। শুধু লোন নয়, একই পদ্ধতিতে তারা ভিসা সরবরাহ, থাই লটারি, অনলাইন ক্যাসিনো বা জুয়ার মাধ্যমেও প্রতারণা করে আসছে।”

তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে সতর্কতা জানিয়ে বলেন:

“আমরা সবাইকে সতর্ক করছি—ঋণ নিতে হলে সরাসরি ব্যাংকে যোগাযোগ করুন। সাইবার স্পেসে ফাঁদ পেতে থাকা প্রতারকদের প্রলোভনে পা দিবেন না। সচেতন থাকুন, অন্যকেও সতর্ক করুন।”

শেষে তিনি গর্বের সঙ্গে বলেন:

“নীলফামারীতে আমার টিমের এটি প্রথম বড় সাফল্য। আমাদের অভিযান চলবে, যতক্ষণ না সব অপরাধী ধরা পড়ে।”

ওসি-র বক্তব্য:

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম আর সাঈদ বলেন:

“প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত চারজন আরও একাধিক প্রবাসীর সঙ্গে একইভাবে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলার কার্যক্রম চলছে এবং তদন্তের মাধ্যমে পুরো নেটওয়ার্কটি উন্মোচন করা হবে।”

প্রবাসীদের টার্গেট করা প্রতারণার নতুন ফাঁদ:

বাংলাদেশে ডিজিটাল প্রতারণার পরিধি দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে প্রবাসীদের লক্ষ্য করে যেসব চক্র কাজ করছে, তাদের প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে মানুষ যেমন অর্থ হারাচ্ছে, তেমনি মানসিকভাবে বিপর্যস্তও হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, হাউজ বিল্ডিং লোন, সহজ ভিসা প্রক্রিয়া, বিদেশে চাকরি নিশ্চিত করার মতো বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রতারণা চক্রগুলো নতুন নতুন কৌশলে ফাঁদ পাতছে।


সচেতনতা ও প্রতিরোধে করণীয়:

✅ কী করবেন না:

  • অপরিচিত কোনো ব্যক্তিকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে লোন দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে অর্থ পাঠাবেন না।
  • প্রতিষ্ঠানের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ছাড়া অন্য কোথাও তথ্য যাচাই না করে সিদ্ধান্ত নেবেন না।

✅ কী করবেন:

  • কোনো সন্দেহ হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করুন।
  • পুলিশের সাইবার অপরাধ ইউনিটে অভিযোগ দিন।

নীলফামারীতে প্রতারণা চক্রের চার সদস্য গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনাটি একটি বড় সাফল্য হলেও, দেশের আরও অনেক জায়গায় এমন প্রতারণা চক্র সক্রিয় রয়েছে। প্রবাসীদের উচিত আরও সচেতন হওয়া এবং কোনো আর্থিক লেনদেনের আগে যথাযথ যাচাই-বাছাই করা।

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই চক্রের আরও সদস্যকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং ভুক্তভোগীদের তথ্য দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।


📌 সম্পর্কিত সংবাদ:

📢 Finix News – সত্য বলার সাহস
🌐 www.finixnews.com

🔗 আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া লিংক:

আরও পড়ুন | Read More
আরও পড়ুন | Read More...

সর্বাধিক পঠিত | Popular Post