হরিপুর – চিলমারী তিস্তা সেতু: উদ্বোধনের তারিখ ঘোষিত, অথচ চিলমারী অংশে এখনো বাকি আড়াই কিলোমিটার কার্পেটিং।
Finix News Desk | চিলমারী, কুড়িগ্রাম | ১৭ জুলাই ২০২৫
দীর্ঘ প্রতীক্ষিত হরিপুর – চিলমারী তিস্তা সেতুর উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে আগামী ২ আগস্ট। তবে উদ্বোধনের তারিখ ঘনিয়ে এলেও চিলমারী অংশের সংযোগ সড়কের প্রায় আড়াই কিলোমিটার কার্পেটিংয়ের কাজ এখনো অসম্পূর্ণ, যা স্থানীয়দের মাঝে উদ্বেগ ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, চিলমারী তিস্তা সেতুর মূল কাঠামো এবং হরিপুর অংশে রাস্তার কাজ প্রায় সম্পন্ন হলেও চিলমারী অংশে এখনও বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এখনো রাস্তা পাকা করণের কাজ বাকি। কার্পেটিংয়ের জন্য প্রস্তুত থাকলেও প্রয়োজনীয় পিচ, যন্ত্রপাতি ও শ্রমিক সংকটের কারণে কাজ আটকে আছে। বৃষ্টির কারণে হরিপুর – চিলমারী তিস্তা সেতুর অন্যান্য টুকিটাকি কাজ ভালোই ব্যাহত হচ্ছে।
প্রকল্পের পটভূমি:
উল্লেখ্য, ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপর নির্মিত এই হরিপুর – চিলমারী তিস্তা সেতুটি চিলমারী উপজেলার সঙ্গে রৌমারী, রাজিবপুর ও অন্যান্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন যাতায়াত সময় ও ব্যয় কমবে, অন্যদিকে স্থানীয় কৃষিপণ্য, মাছ ও অন্যান্য পণ্য দ্রুত বাজারজাত করা সম্ভব হবে।
প্রকল্পটি প্রথমে ২০২১ সালে একনেকে অনুমোদিত হয়, যার কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের মাঝামাঝি। সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় ১ কিলোমিটার হলেও দুই প্রান্তে প্রায় ১০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের অংশ। চিলমারী অংশে প্রায় ৩.৮ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে, যার মধ্যে প্রায় ২.৫ কিলোমিটার এখনো কার্পেটিং হয়নি।
প্রশাসনের আশ্বাস বনাম বাস্তবতা:
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন একাধিকবার জানিয়েছেন, সেতুর কাজ “প্রায় শেষ পর্যায়ে” এবং সময়মতোই উদ্বোধন হবে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, “প্রায় শেষ” বললেও বাস্তবে পরিস্থিতি ভিন্ন।
চিলমারী উপজেলার এক জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“উদ্বোধনের চাপ আছে কেন্দ্র থেকে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, চিলমারী অংশে এখনো ভারী যান চলাচল সম্ভব নয়। কার্পেটিং না হলে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, ভিভিআইপি মুভমেন্টও ঝুঁকিপূর্ণ।”
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতার অভাব:
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাস্তার কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন যাবত চিলমারী অংশে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও মানবসম্পদ পাঠায়নি। এতে কাজের গতি ব্যাহত হয়েছে। বর্ষার মৌসুমে রাস্তা কাজ আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী, আব্দুল হালিম বলেন,
“আমরা ভেবেছিলাম, এই সেতু দিয়ে একদিন চিলমারী পাল্টে যাবে। কিন্তু উদ্বোধনের আগেই যদি এমন অবস্থা থাকে, তাহলে ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা থেকেই যায়।”
স্থানীয় জনদুর্ভোগ:
অপূর্ণ সংযোগ সড়কের কারণে চিলমারীবাসীর মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ চিলমারী তিস্তা সেতু উদ্বোধনের আগেই সেতু দিয়ে চলাচলের চেষ্টা করছেন, কিন্তু কাঁচা ও অসম্পূর্ণ সড়ক কারণে ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এক শিক্ষার্থী জানায়,
“স্কুলে যেতে এখনো ঘুরপথেই যেতে হচ্ছে। আমরা ভেবেছিলাম জুলাইয়ের শেষে সেতু দিয়ে যাব। কিন্তু এখনো রাস্তা শেষ হয়নি।”
উদ্বোধন উপলক্ষে প্রস্তুতি:
২ আগস্ট সেতুর উদ্বোধনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান,
“আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি চিলমারী অংশের কাজ দ্রুত শেষ করতে। প্রতিদিন ৫০-৬০ শ্রমিক কাজ করছেন। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে, তাহলে সময়মতো শেষ করা সম্ভব।”
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “তাড়াহুড়ো করে কাজ করলে মানের ঘাটতি দেখা দিতে পারে,” যা ভবিষ্যতে দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সামগ্রিক মূল্যায়ন:
সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি দেশের উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হলেও, এর কাজের ধীরগতি ও পরিকল্পনার অসামঞ্জস্যতা জনআস্থায় আঘাত করেছে। বিশেষ করে চিলমারী অংশের অবহেলা যেন এই উন্নয়ন প্রকল্পকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
সেতুর সময়মতো উদ্বোধন কতটা যৌক্তিক ও টেকসই হবে, তা নিয়ে এখনই প্রশ্ন তুলছেন এলাকাবাসী ও স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা।
প্রশাসন যদি সত্যিই সেতুটিকে জনগণের কল্যাণে কাজে লাগাতে চায়, তাহলে কেবল “উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা” নয়—পরিপূর্ণ নির্মাণ, টেকসই মান এবং স্থানীয় চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করাটাই হবে আসল সাফল্য।
আরও পড়ুন:
- তিস্তা সেতু: ঢাকার সঙ্গে কুড়িগ্রামের দূরত্ব কমবে ১৩৫ কিলোমিটার।
- ধরলার আগ্রাসী ভাঙনে বিপর্যস্ত কুড়িগ্রাম। হুমকিতে ৫ শতাধিক পরিবার ও কোটি টাকার স্থাপনা!
- তিস্তা মহাপরিকল্পনা এ বছরের শেষেই চূড়ান্ত হবে: রিজওয়ানা হাসান
Finix News | খবর সবার আগে, সবার পাশে।