‘হাঙ্গার গেমস’ বাস্তবে: গাজার ত্রাণকেন্দ্রে ইসরায়েলের গণহত্যা।
📅 প্রকাশের তারিখ: ২৯ জুন ২০২৫
✍️ রিপোর্টার: ফিনিক্স নিউজ ডেস্ক
গাজা, ফিলিস্তিন : গাজার জনগণের জন্য বরাদ্দকৃত খাদ্য সহায়তা এখন তাদের জন্য মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলি অবরোধ, মানবিক সহায়তার অভাব এবং সংগঠিত ত্রাণ ব্যবস্থার ধ্বংসে গাজার মানুষদের বেঁচে থাকা একটি মারাত্মক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।
২০২৫ সালের মার্চ থেকে গাজা একটি সম্পূর্ণ অবরোধের অধীনে আছে। খাদ্যসংকট চরমে পৌঁছেছে। অনেক পরিবার দিনে মাত্র একটি বেলা খেতে পারে, আবার কেউ কেউ একাধিক দিন না খেয়ে থাকে।
💣 ‘নেতসারিম করিডোর’: একটি মৃত্যুকেন্দ্র:
মে মাসের শেষদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত Gaza Humanitarian Foundation (GHF) গাজায় সীমিত সহায়তা সরবরাহ শুরু করে। তবে সহায়তার সেই স্থানগুলো এখন বাস্তবে ‘মৃত্যুকেন্দ্রে’ পরিণত হয়েছে।
সালাহউদ্দিন সড়কের পাশে স্থাপিত নেতসারিম করিডোর নামে পরিচিত এলাকাটি এখন স্থানীয়দের কাছে “ডেথ করিডোর” নামে পরিচিত। সেখানে নেই কোনো ত্রাণকর্মী, নেই কোনো শৃঙ্খলা—শুধু বালি, ধূলিঝড় আর আতঙ্কের রাজত্ব। আকাশে চক্কর দেয় ড্রোন, আশপাশে টহলে থাকে ইসরায়েলি ট্যাংক ও স্নাইপার।
একজন বেঁচে ফেরা ব্যক্তি বলেন, “হঠাৎ লাউডস্পিকারে ঘোষণা আসে—‘চার মিনিট সময়! যা নিতে পারো, নিয়ে নাও!’ এরপর ত্রাণ বাক্সগুলো পড়ে থাকে বালির মাঝে, আর মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে সেই দিকে।”
⚰️ গুলিবর্ষণ ও লাশের স্তূপ:
তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন ৫০০-র বেশি ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন ৪ হাজারেরও বেশি।
সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা ঘটে ১৭ জুন, যখন সালাহউদ্দিন সড়কের পাশে আটা নিতে জড়ো হওয়া হাজারো মানুষের ওপর ইসরায়েলি ড্রোন থেকে গুলি চালানো হয়, এরপর ট্যাংক থেকে শেল নিক্ষেপ। এতে অন্তত ৪৭ জন নিহত ও ২০০+ আহত হন।
😢 ব্যক্তিগত গল্প, অজস্র কান্না:
- সুবহি, একজন দরিদ্র বাবা, ১৪ জুন একমুঠো খাবারের আশায় নেতসারিম করিডোরে যান। সেদিনই ছিল তাঁর শেষ যাত্রা। কয়েক ঘণ্টা পর তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে প্যারামেডিক দল।
- খামিস, এক তরুণ, যিনি তাঁর ভাইয়ের মৃত্যুর পর পরিবারকে আগলে রেখেছিলেন, ২৪ জুন গুলিবিদ্ধ হন। একটি ড্রোন থেকে ছোড়া গুলি তাঁর বুকে বিদ্ধ হয়। তিনি ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন।
🧠 পরিকল্পিত বিশৃঙ্খলা, মানবিকতার ধ্বংস:
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একে “ত্রাণ গণহত্যা” বলে অভিহিত করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা একে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই বিশৃঙ্খলা পরিকল্পিত। ইসরায়েল চাইছে ফিলিস্তিনিরা যেন ত্রাণের জন্য একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, সামাজিক সংহতি ভেঙে পড়ে। তাই তারা আগেই UNRWA-কে নিষিদ্ধ করেছে, যারা সুসংগঠিত ও ন্যায়ভিত্তিক ত্রাণ ব্যবস্থা পরিচালনা করছিল।
🌍 বিশ্ব নীরব, মানবতা ব্যর্থ:
সত্ত্বেও, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনও নীরব। এমনকি ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমও স্বীকার করেছে, সেনাবাহিনীকে জনগণের ওপর গুলি চালাতে আদেশ দেওয়া হয়েছিল।
এই নিষ্ঠুরতা, এই নীরবতা, মানবতার বড় ব্যর্থতা। গাজার মানুষ আজ প্রশ্ন করছে:
“আমরা মরছি, আর বিশ্ব কি শুধু দেখেই যাবে?”
📢 Finix News – সত্য বলার সাহস
🌐 www.finixnews.com | ✉️ [email protected]