ইসরায়েলি ভয়াবহ বোমাবর্ষণে গাজায় নিহত ৭৮, থমকে আছে যুদ্ধবিরতির আলোচনা!
Finix News Desk | আন্তর্জাতিক | ১৫ জুলাই ২০২৫
ইসরায়েলি বাহিনীর ধারাবাহিক বিমান হামলায় আবারও রক্তাক্ত গাজা। সোমবার দিনভর চালানো ভয়াবহ হামলায় কমপক্ষে ৭৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন ত্রাণ সংগ্রহে যাওয়া সাধারণ মানুষ। এই হামলার ঘটনায় আরও অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছেন।
যুদ্ধবিরতির আলোচনা যখন স্থবির, তখনই এমন নিষ্ঠুর হামলা চালাল ইসরায়েল। একইসাথে গাজার ওপর অব্যাহত অবরোধ ও ত্রাণসামগ্রী প্রবেশে কড়াকড়ির কারণে চরম মানবিক সংকটে পড়েছে পুরো অঞ্চলটি।
ত্রাণকেন্দ্রে হামলা, একদিনেই নিহত ৭৮:
দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের এক ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৫ জন বেসামরিক ফিলিস্তিনি নিহত হন, বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের সরকারি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা।
ওয়াফার তথ্য অনুযায়ী, বিতর্কিত Gaza Humanitarian Foundation (GHF) পরিচালিত সহায়তা পয়েন্টের আশপাশে চালানো হামলাগুলোর মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৮৩৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে খান ইউনিস শহরের একটি আশ্রয় শিবিরে চালানো হামলায় নিহত হয়েছেন ৯ জন এবং আহত হয়েছেন আরও অনেকে। মধ্য গাজার বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে একটি বাণিজ্যিক ভবনে হামলায় নিহত হন আরও ৪ জন।
গাজা শহর ও উত্তরে টুফাহ ও শুজাইয়া এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে কমপক্ষে ২৪ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী, বলে জানিয়েছে ওয়াফা। শহরের বহু আবাসিক ভবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলি ট্যাংক হামলায় সেনা নিহত, পাল্টা এয়ারস্ট্রাইক:
গাজা শহরে একটি ইসরায়েলি ট্যাংকে রকেট হামলা চালানো হয়, যা পরবর্তীতে সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে ৩ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হন বলে নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এর জবাবে বিমান থেকে চালানো হয় ভয়াবহ পাল্টা হামলা।
আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজজুম জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী “ভয়ঙ্কর এয়ারস্ট্রাইক” চালিয়েছে, যার ফলে বহু আবাসিক ভবন মাটির সাথে মিশে গেছে।
গাজায় খাদ্য ও জ্বালানির তীব্র সংকট, মানবিক বিপর্যয়ের মুখে:
ইসরায়েলের অবরোধ ও জ্বালানি প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার কারণে গাজায় বর্তমানে পানির সংকট, চিকিৎসাসেবা ধ্বংস, এবং ত্রাণ সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ইউএন সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, যদি দ্রুত সাহায্য না পৌঁছায়, তাহলে দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দেখা দিতে পারে।
গাজার পানি পরিশোধন, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।
মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলআত্তি বলেছেন, “ইসরায়েল ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যকার সমঝোতা অনুযায়ী গাজায় সাহায্য প্রবাহ বাড়ার কথা থাকলেও বাস্তবে কিছুই পরিবর্তন হয়নি।”
জর্দানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি একে সরাসরি “একটি বাস্তব বিপর্যয়” হিসেবে আখ্যা দেন।
দোহায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা অচল, একে অপরকে দোষারোপ করছে হামাস ও নেতানিয়াহু:
কাতারের দোহায় চলমান পরোক্ষ আলোচনায় এখনো কোনও অগ্রগতি হয়নি। মূল আলোচনা চলছে ইসরায়েলি বাহিনীর গাজায় অবস্থান ও টহলের মানচিত্র ঘিরে। সূত্র জানিয়েছে, “মধ্যস্থতাকারীরা সৃষ্টিশীল কৌশল খুঁজছেন আলোচনা এগিয়ে নিতে।”
হামাস বলছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইচ্ছাকৃতভাবে আলোচনা নষ্ট করছেন।
“নেতানিয়াহু বারবার আলোচনার পথ বন্ধ করে দিচ্ছেন। তিনি কোন শান্তি চুক্তিতে বিশ্বাস করেন না,”—হামাস এক বিবৃতিতে জানায়।
রাফায় ‘মানবিক শহর’ গড়ার পরিকল্পনায় বিতর্ক, UN বলছে ‘ঘনীভবন শিবির’:
একই সময় নেতানিয়াহুর সরকার রাফায় ৬ লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিকে রাখার জন্য নতুন ‘মানবিক শহর’ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে, যা ঘিরে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিরোধ দেখা দিয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (UNRWA) বলেছে, এটি একপ্রকার “ঘনীভবন শিবির” বা “concentration camp” তৈরির সমান।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন অনেক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ। তাঁদের মতে, যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় এক বিশাল জনবসতি তৈরি করা অবাস্তব ও বিপজ্জনক।
একদিকে তীব্র হামলা, অন্যদিকে বন্ধ হয়ে যাওয়া ত্রাণ প্রবাহ—গাজার সাধারণ মানুষের জীবন আজ মৃত্যু উপত্যকা হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। আন্তর্জাতিক চাপ বাড়লেও যুদ্ধ ও মানবিক বিপর্যয়ের কোনো শেষ দেখা যাচ্ছে না।
📌 সম্পর্কিত সংবাদ:
📢 Finix News – সত্য বলার সাহস
🌐 www.finixnews.com | ✉️ [email protected]