ধরলার আগ্রাসী ভাঙনে চরগোরকমন্ডল বিপর্যস্ত: হুমকিতে পাঁচ শতাধিক পরিবার ও কোটি টাকার স্থাপনা!
Finix News ডেস্ক | কুড়িগ্রাম | প্রকাশিত: ১১ জুলাই ২০২৫
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চরগোরকমন্ডল এলাকায় ধরলা নদীর তীব্র ভাঙনে অর্ধশতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি, শত শত বিঘা ফসলি জমি এবং কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সরকারি স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। ইতোমধ্যে অনেক পরিবার তাদের শেষ আশ্রয়টুকুও হারিয়ে পথে বসতে শুরু করেছে। চরম অনিশ্চয়তা আর দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে কাটছে স্থানীয়দের দিনরাত।
আগাম ঘর সরিয়ে নিচ্ছেন গ্রামবাসী:
ভাঙনের আতঙ্কে কেউ কেউ ইতোমধ্যে তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। কিন্তু সবার পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া আলা-বকস (৬৫) বলেন,
“কি কই বাহে, ৬৫ বছরে পাঁচবার নদী আমার বাড়ি নিছে। নিজের জমি নাই। শ্যালকের জমিতে কোনোরকমে ঘর তুইরি করছি, কিন্তু টাকার অভাবে কাজ থুইরা গেছি।”
তিনি জানান, জীবিকা নির্বাহের জন্য আনন্দ বাজারে একটি ছোট সুতা ও রশির দোকান চালান তিনি, যেটি দিয়েই কোনোভাবে সংসার চালান।
একাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে:
স্থানীয় যুবক কামাল হোসেন, আব্দুল কুদ্দুস, নুর আলম ও জাহিদুল জানালেন, ইতোমধ্যে জাবেদ আলী, মনসের আলী, আজিবর রহমান, আজগর আলীসহ কয়েকজনের বাড়িঘর ধরলার গহ্বরে তলিয়ে গেছে। এলাকার আরও প্রায় ৫০০ পরিবার এখন মারাত্মক হুমকির মুখে।
এছাড়া চরগোরকমন্ডলে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি মুজিব কেল্লা ভবনও এখন নদীভাঙনের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে একটি স্কুল, মাদ্রাসা ও একাধিক সামাজিক অবকাঠামো।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্বেগ:
চর গোরকমন্ডল ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আয়াজ উদ্দিন জানান,
“গত বর্ষায় ধরলার তীব্র ভাঙনে প্রায় ৩০টি পরিবার এবং প্রায় আধা কিলোমিটার সড়কসহ শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে যায়। তখন আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানালে তারা ৫-৬ হাজার জিওব্যাগ দেয়, কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।”
তিনি বলেন, এবারের বর্ষায় ভাঙন আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতির মাত্রা আরও বেড়ে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিওব্যাগ সংকট:
নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাছেন আলী বলেন,
“আমি ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে আবেদন জানানো হবে।”
এদিকে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান,
“গত বছর চরগোরকমন্ডলে ৭ হাজার জিওব্যাগ ফেলানো হয়েছে। আপাতত জিওব্যাগের মজুদ নেই। নতুন বরাদ্দ এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
টেকসই তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি:
স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহল ধরলার ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত টেকসই তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। তাদের দাবি, সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে চরগোরকমন্ডল মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে।
🛑 পাঠকদের অনুরোধ:
আপনার এলাকাতেও যদি এমন নদীভাঙনের খবর থাকে, আমাদের জানান। Finix News রয়েছে জনগণের পাশে।
📌 আরও খবর পড়ুন: www.finixnews.com
📧 যোগাযোগ করুন: [email protected]