Sunday, June 29, 2025
Homeকুড়িগ্রামকুড়িগ্রাম ডিসি পার্ক বিতর্ক : স্মৃতি, সম্মান ও বিতর্কের গল্প!

কুড়িগ্রাম ডিসি পার্ক বিতর্ক : স্মৃতি, সম্মান ও বিতর্কের গল্প!

কুড়িগ্রাম ডিসি পার্ক : স্মৃতি, সম্মান ও বিতর্কের গল্প ! কুড়িগ্রাম একটি জীবন্ত স্মৃতির মিনার।

📍 কুড়িগ্রাম | বিশেষ প্রতিবেদন | Finix News Desk

কুড়িগ্রাম শুধু একটি জেলা নয়, এটি একটি জীবন্ত স্মৃতির মিনার।
ব্রিটিশ আমল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত কুড়িগ্রাম ছিল একটি মহকুমা। সেই সময়ের এক স্মরণীয় প্রশাসক ছিলেন গওহর জামিল চৌধুরী। মানবিক গুণাবলী, সাংস্কৃতিক রুচি এবং দূরদর্শিতার মিশেলে তিনি ছিলেন অনন্য। তিনি বর্তমান মজিদা কলেজের পাশের জঙ্গলাকীর্ণ মাঠটি পরিষ্কার করে জনসাধারণের ব্যবহারের উপযোগী করে তোলেন। খনন করেন একটি পুকুর বা ডিগি। কৃতজ্ঞ কুড়িগ্রামবাসী ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার চিহ্নস্বরূপ এই জায়গার নাম দেন – গওহর পার্ক


গওহর পার্ক: আমাদের শৈশব, আমাদের অহংকার:

এই মাঠেই প্রতিদিন ভোরবেলা ঘুম ভেঙে আমরা ছুটে যেতাম ব্যাট-বল, ফুটবল নিয়ে।
এই মাঠেই খেলেছেন পাকিস্তান আমলে অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী মরহুম খোকা, ফুটবল কিংবদন্তি এটিএম আফজাল হোসেন। এখান থেকেই উঠে এসেছেন মোহামেডানের ‘রেসলেস হর্স’ খ্যাত কোহিনুর, আবু বক্কর সিদ্দিক, ধলু, হিরা, দোলন, রাজু, চঞ্চল, লুলু, লিটন, স্বপনসহ অসংখ্য ফুটবলার, ভলিবল খেলোয়াড় ও অ্যাথলেট।

কুড়িগ্রামের প্রথম শহীদ মিনার।
কুড়িগ্রামের প্রথম শহীদ মিনার।

এই মাঠেই নির্মিত হয় কুড়িগ্রামের প্রথম শহীদ মিনার। অনুষ্ঠিত হয়েছে কাশেম গোল্ডকাপ ও অন্যান্য মর্যাদাপূর্ণ লীগ ম্যাচ।
স্টেডিয়াম নির্মাণের আগ পর্যন্ত এখানেই হতো জাতীয় দিবসের কুচকাওয়াজ, মহকুমা পর্যায়ের অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা।
অনেক বিশিষ্ট ইসলামিক চিন্তাবিদ এই মাঠে বক্তব্য দিয়ে গিয়েছিলেন। আবার মানুষের বিনোদনের জন্য মাঝেমধ্যে সার্কাসও অনুষ্ঠিত হতো।

আজও জ্বলজ্বল করে সেই ঐতিহাসিক স্মৃতির জীবন্ত সাক্ষী – গওহর পার্ক জামে মসজিদ


নাম বদলের ক্ষত: নিউ টাউন পার্ক থেকে সুলতানা সরোবর:

নতুন শহরে, মহকুমা অফিসের পাশে ছিল একটি পরিচিত পুকুর, যা দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত ছিল নিউ টাউন পার্ক নামে।

নিউ টাউন পার্ক, কুড়িগ্রাম (পুরনো ছবি), সংস্কারের পর বর্তমান নাম সুলতানা সরোবর।
নিউ টাউন পার্ক, কুড়িগ্রাম (পুরনো ছবি), সংস্কারের পর বর্তমান নাম সুলতানা সরোবর।

আমাদের শৈশব-কৈশোরের পিকনিক, সাঁতার প্রতিযোগিতা, আড্ডা—সবই আবর্তিত হয়েছে এই পুকুরের চারপাশে।

পরবর্তীতে এক জেলা প্রশাসকের সময় পুকুরটি সংস্কার করে নাম রাখা হয় সুলতানা সরোবর
তখন প্রশ্ন উঠেছিল, “দীর্ঘদিন ধরে মানুষ যে নামটির সঙ্গে পরিচিত, তা হঠাৎ বদলে দেওয়ার যৌক্তিকতা কী?”
এই নাম পরিবর্তন এখনও অনেকের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দেয়।


নতুন পার্ক, নতুন নাম? ‘ডিসি পার্ক’ নিয়ে বিতর্ক:

ধরলা ব্রিজ সংযোগ সড়কের পাশে একটি ৩৫ একর খাসজমি, যা বর্ষায় পানিতে ডুবে থাকত আর শীতে মাঝেমধ্যে হতো বাণিজ্য মেলা।

কুড়িগ্রাম ডিসি নুসরাত সুলতানা কুড়িগ্রাম ডিসি পার্ক নির্ধারিত স্থান ঘুরে দেখছেন।
কুড়িগ্রাম ডিসি নুসরাত সুলতানা কুড়িগ্রাম ডিসি পার্ক নির্ধারিত স্থান ঘুরে দেখছেন।

এই ব্যবহৃতহীন জমিকে ঘিরেই এখন গড়ে উঠছে একটি নতুন পার্ক। বর্তমান জেলা প্রশাসক জনাব নুসরাত সুলতানা ড্রেজিং করা বালু দিয়ে জমিটি ভরাট করে একটি সুদৃশ্য, সবুজ, বিনোদন পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন।

কুড়িগ্রামের অনেক সচেতন নাগরিক এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে প্রস্তাব রেখেছেন, এই নতুন পার্কের নাম হোক ‘ডিসি পার্ক’

তাদের যুক্তি:
১। এটি সম্পূর্ণ নতুন একটি প্রকল্প, যেমন একসময় ছিল গওহর পার্ক।
২। এটি জেলা প্রশাসনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে।
৩। ভবিষ্যতের যেকোনো জেলা প্রশাসক এই পার্কের রক্ষণাবেক্ষণে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করবেন।


নামকরণ কি শুধু সম্মান, না কৃতজ্ঞতার প্রতীক?

জেলা প্রশাসক জনাব নুসরাত সুলতানা কেবল এই পার্ক প্রকল্পেই সীমাবদ্ধ নন।

সংস্কারের পর বর্তমান সুলতানা সরোবর।
সংস্কারের পর বর্তমান সুলতানা সরোবর।

তিনি চরাঞ্চলের দুঃস্থ মানুষের কষ্ট নিজ চোখে দেখার জন্য পায়ে হেঁটে, কখনো মোটরসাইকেলে দুর্গম চরে পৌঁছে যাচ্ছেন।
তিনি সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলাদা ‘চর মন্ত্রণালয়’ গঠনের দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন নিরলসভাবে।

এই কর্মনিষ্ঠা, দায়িত্ববোধ ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অনেকেই মনে করছেন—এই পার্ক তাঁর সম্মানেই ‘ডিসি পার্ক’ নামে পরিচিত হোক।


কুড়িগ্রাম আমাদের সবার:

নাম নিয়ে ভিন্নমত থাকতে পারে, বিতর্ক থাকাও স্বাভাবিক।
কিন্তু একে যদি আমরা স্মৃতি, সম্মান, ইতিহাস এবং ভবিষ্যতের প্রতীক হিসেবে দেখি, তাহলে এই বিতর্ক আর বিভাজন নয়, একতা ও ঐক্যের রূপ নিতে পারে।

আমরা চাই, এই পার্ক হোক কুড়িগ্রামের সকল মানুষের জন্য মুক্তচিন্তার, নির্মল পরিবেশের, পরিবারকেন্দ্রিক একটি প্রাণচঞ্চল স্থান।
নাম যেটিই হোক না কেন, জনগণের মতামতই হোক সর্বোচ্চ বিবেচ্য


ভালো থাকুন সকলে। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে এই দোয়া করি, তিনি যেন আমাদের প্রিয় কুড়িগ্রামকে একটি উন্নত, ঐতিহাসিক ও সুন্দর জেলায় পরিণত করেন।

আল্লাহ হাফেজ।

মূল লেখা :

প্রফেসর কাজী শফিকুর রহমান, অধ্যক্ষ, কুড়িগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ, কুড়িগ্রাম।
প্রফেসর কাজী শফিকুর রহমান, অধ্যক্ষ, কুড়িগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ, কুড়িগ্রাম।

প্রফেসর কাজী শফিকুর রহমান
অধ্যক্ষ,
কুড়িগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ, কুড়িগ্রাম।


📩 Finix News | [email protected]
📰 পাঠকের মতামত ও স্মৃতিচারণ শেয়ার করতে ইনবক্স করুন

 

আরও পড়ুন..
Like and Follow us on Facebook..
আরও পড়ুন | Read More

সর্বাধিক পঠিত