ইমাম মাহাদীর আগমন ও পরিচয়।
finix news প্রতিবেদন | প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫ ইং
বিশ্ব পরিস্থিতি যখন চরম অস্থিরতায়, অন্যায়-অবিচার ও দুঃশাসনে ভরে উঠছে প্রতিটি কোণ, তখন বারবার আলোচনায় আসছেন এক প্রতিশ্রুতিশীল ও রহস্যময় নেতা ইমাম মাহাদী (আ.)। কে তিনি, কোথা থেকে আসবেন, কী হবে তাঁর ভূমিকা—এসব প্রশ্ন নিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষদের আগ্রহের শেষ নেই। এই প্রতিবেদনে ইমাম মাহদি সংক্রান্ত হাদিসভিত্তিক তথ্য ও বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো।
পরিচয় ও বংশ:
ইমাম মাহাদী প্রকৃত নাম মুহাম্মাদ, পিতার নাম আবদুল্লাহ। তিনি হবেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বংশধর। হাদিসে বর্ণিত, তিনি ফাতেমা (রা.)-এর বংশ থেকে আগমন করবেন। মুসলমানরা তাঁকে মাহদি নামেই বেশি চেনে, যার অর্থ—ন্যায়নিষ্ঠ, সুপথপ্রাপ্ত ও প্রতিশ্রুত নেতা।
আগমনের সময় ও স্থান:
হাদিসসমূহে তাঁর জন্ম বা আগমনের নির্দিষ্ট সাল নেই। তবে বিশ্বাস করা হয়, কিয়ামতের পূর্বে পৃথিবীতে তাঁর আগমন হবে। কেউ বলেন, তাঁর জন্ম হবে মদিনায়, আবার কেউ কেউ মনে করেন, কুফাই হবে তাঁর আত্মপ্রকাশের স্থান। তবে অধিকাংশ আলেমের মতে, তিনি মদিনা থেকে মক্কায় এসে বাইয়াত গ্রহণ করবেন।
আগমনের আলামত:
ইমাম মাহদির আগমনের আগে পৃথিবীতে অন্যায়-অবিচার, হত্যা, পাপাচার, ব্যভিচার, লুটতরাজ এবং ধর্মহীনতা চরম আকার ধারণ করবে। সত্য হারিয়ে যাবে, এবং অত্যাচার-জুলুমে ক্লান্ত হবে জাতি ও রাষ্ট্র। হাদিসে আছে, তিনি আসবেন ঠিক তখনই, যখন মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে।
চেহারার বর্ণনা:
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “মাহদি আমার বংশধর। তাঁর ললাট উজ্জ্বল ও নাক উঁচু এবং মধ্যভাগ কিছুটা চওড়া হবে। তিনি পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে তুলবেন, যেভাবে তা আগে অন্যায়ে ভরে গিয়েছিল।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪২৮৫)
রাজত্বকাল:
ইমাম মাহদির শাসনকাল নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
- সিলসিলায়ে সহিহা (হাদিস ৭১১) মতে, তিনি সাত বা আট বছর রাজত্ব করবেন।
- কাতাদাহ (রহ.) ও ইমাম আবু দাউদ (রহ.)-এর মতে, তাঁর শাসনকাল হতে পারে নয় বছর পর্যন্ত।
মাহদির যুগের বৈশিষ্ট্য:
তাঁর শাসনামলে বরকত নেমে আসবে। আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষিত হবে, জমিন ফসল ভরে উঠবে, পশুপালনের উন্নতি হবে। অর্থনীতি হবে সমবন্টনের মাধ্যমে পরিচালিত। নিরাপত্তা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা পাবে সমাজে।
ইসা (আ.)-এর আগমন ও দাজ্জালবিনাশ:
ইমাম মাহদির সময়েই ইসা (আ.) পৃথিবীতে আগমন করবেন এবং তাঁর ইমামতিতে নামাজ আদায় করবেন। পরে ইসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন এবং ইমাম মাহদি এ কাজে তাঁকে সহায়তা করবেন।
ফিলিস্তিনে শেষ সময়:
বিশ্বাস করা হয়, ইমাম মাহদির রাজত্বের শেষ সময়ে তিনি মুসলিম বাহিনী নিয়ে ফিলিস্তিনে মসজিদুল আকসায় আশ্রয় নেবেন। বাইরে দাজ্জালের বাহিনী তাদের ঘিরে ফেলবে। তখন ইসা (আ.) দামেস্ক থেকে ফিলিস্তিনে এসে মুসলমানদের বিজয় নিশ্চিত করবেন।
ইমাম মাহদির আগমন ইসলামের আখিরুজ্জামান দর্শনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তিনি হবেন ন্যায়, শান্তি ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রেরিত একজন মহান নেতা, যিনি উম্মতের ঐক্য ও আত্মমর্যাদা ফিরিয়ে আনবেন। বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিরতা ও বিভ্রান্তির যুগে এ বিষয়গুলো নিয়ে সচেতনতা ও গবেষণা সময়োপযোগী।
তথ্যসূত্র: সহিহ হাদিস, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে তিরমিজি, সিলসিলায়ে সহিহা, কানজুল উম্মাল, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, কিতাবুল ফিতান
Finix News | ধর্ম ও জীবন বিভাগ
যোগাযোগ: [email protected]