ড. ইউনুস সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ-জাপান ছয়টি সমঝোতা স্মারক সই।
টোকিও, ৩০ মে ২০২৫ | Finix News | ফিনিক্স নিউজ:
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চলমান জাপান সফরের তৃতীয় দিনে আজ শুক্রবার বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ছয়টি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে।
জাপানের রাজধানী টোকিওতে আয়োজিত “Bangladesh Business Seminar”-এর ফাঁকে এসব সমঝোতা স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে অভিনন্দন জানান।
ছয়টি সমঝোতা স্মারক:
১. জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (JBIC) এবং বাংলাদেশের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এর মধ্যে স্বাক্ষরিত MoU’র মাধ্যমে জ্বালানি খাতে প্রকল্প বাস্তবায়নে যৌথ সহযোগিতার দ্বার উন্মোচন হলো।
২. ONODA Inc এবং Bangladesh SEZ Ltd-এর মধ্যে বিএসইজেডে (BSEZ) জমি লিজ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। জাইকার একটি গ্যাস মিটার প্রকল্পে কাজ করা ONODA এবার গ্যাস মিটার উৎপাদন, সংযোজন ও রক্ষণাবেক্ষণের নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে।
৩. Bangladesh Naxis Co. Ltd ও Bangladesh SEZ Ltd-এর মধ্যে বিএসইজেডে জমি সাব-লিজ সংক্রান্ত চুক্তি হয়। এখানে পোশাক খাতে অ্যাকসেসরিজ উৎপাদনের কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
৪. Glafit ও Musashi Seimitsu Industry যৌথভাবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA)-এর সঙ্গে ই-বাইক ও ব্যাটারিচালিত বাইসাইকেল উৎপাদন কারখানা স্থাপনের জন্য সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে।
৫. Cipher Core Co. Ltd বাংলাদেশে ২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে Complete Cipher Technology ভিত্তিক তথ্য নিরাপত্তা প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছে। প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে কোয়ান্টাম-প্রতিরোধী ডিজিটাল অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করা।
৬. জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (JICA) ও BIDA একসাথে একটি Integrated Single Window Platform (ISWP) এর প্রাথমিক পর্যায়ের কারিগরি সহায়তা ও যন্ত্রপাতি সরবরাহে একমত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য:
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন,
“এখন আমাদের কাজ হলো বাস্তবায়ন। আমি আবেগাপ্লুত।”
তিনি বলেন, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশ একের পর এক রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ভূমিকম্পের মধ্য দিয়ে গেছে, যা সবকিছু ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেয়।
“এই পরিস্থিতিতে এক ভালো বন্ধু এগিয়ে এলো, আর সেই বন্ধু হলো জাপান। আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে এবং আগামী পথরেখা তৈরি করতে এসেছি,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন,
“আমরা কোমর বেঁধে কাজে নেমেছি। এটা শুধু টাকা আয়ের জন্য নয়, বরং মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার জন্য।”
অন্যান্য বক্তার মন্তব্য:
- শিনজি টেকেউচি, জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্টারি ভাইস-মিনিস্টার বলেন,
“বর্তমানে বাংলাদেশে জাপানি কোম্পানির সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে, যা গত ১০ বছরে প্রায় ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি।”
- নোরিহিকো ইশিগুরো, চেয়ারম্যান ও সিইও, JETRO অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
- ফুমিয়া কোকুবু, মারুবেনি করপোরেশনের নির্বাহী কর্পোরেট উপদেষ্টা এবং Japan-Bangladesh Committee for Commercial and Economic Cooperation (JBCCEC) এর চেয়ারম্যান হিসেবে বক্তব্য দেন।
এই সমঝোতাগুলো বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্কের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করলো। উন্নয়ন, প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ খাতে বাস্তবসম্মত সহযোগিতার ভিত্তি রচিত হলো, যা দুই দেশের অর্থনীতির জন্যই হবে এক যুগান্তকারী অধ্যায়।