আওয়ামী লীগ ও রোহিঙ্গা নিয়ে ড. ইউনূসের বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার।
🟩 Finix News ডেস্ক | ২১ জুন ২০২৫ | ঢাকা
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্ট ভাষায় বর্তমান বাস্তবতা ও অতীত ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালের সিদ্ধান্ত, আন্তর্জাতিক পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যর্থতা, এবং দায়সারা রোহিঙ্গা নীতির দায় অস্বীকার করতে পারেননি।
“আমরা নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি, কিন্তু এটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব”:
সাক্ষাৎকারের শুরুতেই বিবিসির প্রশ্ন ছিল, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশে ঘটছে এবং ইউনূস নিজে সবসময় ‘দুর্বলদের পক্ষে’ অবস্থান নিয়েছেন—তাহলে কেন তিনি আরও কার্যকর ভূমিকা রাখছেন না?
জবাবে ড. ইউনূস বলেন,
“আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়েছি, এক লাখের বেশি রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু এখন সবাই শুধু খাবার ও শরণার্থী সহায়তা নিয়ে ব্যস্ত। কেউ ফেরত পাঠানোর টেকসই সমাধান নিয়ে কথা বলছে না।”
আওয়ামী লীগের দায় এড়িয়ে যাওয়ার নীতি:
বিবিসির প্রশ্নে স্পষ্টভাবে উঠে আসে—কেন আওয়ামী লীগ সরকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে একীভূত করতে চায়নি কিংবা ফিরিয়ে নেওয়ার কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়েছে?
ড. ইউনূস বলেন,
“বাংলাদেশের রাষ্ট্রনীতি হলো—রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে স্থায়ী হতে না দেওয়া। কিন্তু এই নীতির পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল, বাস্তব সমাধান নয়। আমরা মানবতার খাতিরে আশ্রয় দিয়েছি, কিন্তু তখন যারা ক্ষমতায় ছিলেন (আওয়ামী লীগ সরকার) তারা সমস্যার গভীরে না গিয়ে এটিকে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি আদায়ের একটি ‘ডিপ্লোম্যাটিক পজিশন’ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। অথচ কার্যকর প্রত্যাবাসনের কূটনীতি তারা চালাননি।”
তিনি আরও বলেন,
“প্রতিশ্রুতি ছিল—কে কোন দেশ কতজন নেবে, সেই সংখ্যাও নির্ধারিত হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার নিজেই এই ফাইলগুলো চাপা দিয়েছিল। ফলে আজও কোনো সমাধান হয়নি।”
“রোহিঙ্গাদের একীভূতকরণ হবে নতুন সামাজিক বিস্ফোরণের সূচনা”:
ড. ইউনূস বলেন,
“যারা মনে করছেন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে একীভূত করে ফেলা যায়, তারা বাস্তবতা থেকে দূরে। ক্যাম্পের আশেপাশের জনগণ রোহিঙ্গাদের কারণে বিরূপ আচরণ করছে, কারণ তারা দেখতে পাচ্ছে বিদেশি সাহায্য কেবল রোহিঙ্গাদের ঘরে যাচ্ছে—এতে স্থানীয় দারিদ্র্য পীড়িত জনগোষ্ঠীর মনে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। এটা দীর্ঘমেয়াদে বড় সামাজিক সমস্যায় রূপ নিতে পারে।”
“আমরা তো সীমান্ত আটকে দেইনি” – রোহিঙ্গা ঢলের দায় নয়, মানবতার দৃষ্টান্ত:
ড. ইউনূস স্মরণ করিয়ে দেন যে,
“আমরা তো বলিনি তোমরা আসতে পারবে না। আমরা তো সীমান্ত আটকে দেইনি। আমরা তাদের মানবতার জায়গা থেকে গ্রহণ করেছি। তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তাদেরকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেই আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থ ছিল।”
বিশ্লেষণ: রাজনৈতিক সমাধানের অব্যবস্থাপনা ছিল নীতি নয়, কৌশল:
বিশেষজ্ঞদের মতে, আওয়ামী লীগ সরকার রোহিঙ্গা সমস্যাকে একটি ‘জনসচেতনতার নিয়ন্ত্রিত সংকট’ হিসেবে ব্যবহার করেছিল—যাতে তারা আন্তর্জাতিক ফোরামে নিজেদের ‘মানবিক সরকারের’ মুখোশ পরিয়ে রাখতে পারে। কিন্তু আসল বাস্তবতায় তারা প্রত্যাবাসন, একীভূতকরণ কিংবা কূটনৈতিক সমাধান—কোনোটিতেই আন্তরিক ছিল না।
ড. ইউনূসের এই বক্তব্য সেই উপেক্ষিত দিকগুলোকে সামনে নিয়ে এসেছে।
————————————————-
রোহিঙ্গা সংকট এখন আর শুধু একটি মানবিক সংকট নয়, এটি পরিণত হয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ভারসাম্য, এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরীক্ষায়। ড. ইউনূস তাঁর আন্তর্জাতিক অবস্থান থেকে এই সংকট সমাধানে আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা তুলে ধরার পাশাপাশি, বর্তমান সরকারের দায়িত্বশীল নীতির পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন।
📲 আরও তথ্য ও বিশ্লেষণ পড়তে ভিজিট করুন:
🌐 www.finixnews.com
📧 [email protected]